বেশিরভাগ গণপরিবহনে ২৬ শতাংশের বেশি ভাড়া নিচ্ছে
৮ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪১
ঢাকা : বর্ধিত ভাড়া নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রোডে যাত্রীদের সঙ্গে গণপরিবহন শ্রমিকদের চলছে বাকবিতণ্ডা। ডিজেলের দাম বাড়ানোর খবরে টানা তিনদিন অঘোষিতভাবে বন্ধ থাকার পর সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে পুনরায় রাস্তায় চলছে গণপরিবহন। এদিন সকাল থেকে ২৬ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় গণপরিবহন চালানোর কথা থাকলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গণপরিবহনগুলোতে। বেশিরভাগ পরিবহনে ২৬ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশক্ষেত্রেই এ সবের সত্যতা মিলেছে।
প্রথমদিনেই বিভিন্ন গণপরিবহনের হেলপার, কন্ডাক্টর ও ড্রাইভারের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন রোডের গণপরিবহনে সরেজমিনে পরিদর্শনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর থেকে কদমতলি পর্যন্ত দিশারী পরিবহনের এতদিন ৩০ টাকা থাকলেও সোমবার নেওয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা। ফলে বর্ধিত ভাড়া ২৬ শতাংশের পরিবর্তে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ। এ নিয়ে দিশারী পরিবহনের হেলপারদের সঙ্গে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে দিশারী পরিবহনের যাত্রী অ্যাডভোকেট ফারহানা ত্রিপলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘৩০ টাকার ভাড়া ৪৫ টাকা দিতে হল। এতে করে প্রতিমাসে শুধু কোর্টে আসার জন্য আমাকে মাসে বাড়তি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশি দিতে হবে। এই বর্ধিত টাকা আমি থেকে কোথায় পাব।’
তিনি বলেন, ‘গত প্রায় দুই বছর ধরে অধিকাংশ সময় আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের এক প্রকার আয় বন্ধ ছিল। ফলে আমিসহ অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করেছি। বর্তমানে কোর্ট চালু হলেও আগের মতো মামলা নেই, ফলে আয়ও কমে গেছে। আগের দুই বছর কোর্ট বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছি। নিজের জমানো টাকা ভেঙে এবং ধার দেনা করে সংসার চালিয়েছি। এই অবস্থায় প্রতি মাসে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা বর্ধিত ভাড়া কিভাবে দেব। আয় তো বাড়েনি বরং করোনার পর কোর্ট খোলা হলেও আয় আগের চেয়ে কমে গেছে।
একই অভিযোগ মামুন চৌধুরীর। যিনি মতিঝিলে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। বাসা মিরপুর টোলারবাগ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে বেতন ৫০ কমে গেছে, বর্তমানে কম বেতনেই চাকরি করছি। নিজের পরিবার এতোদিন ঢাকা থাকলেও গত এক বছর ধরে গ্রামে পাঠিয়েছি। চাকরি করে যে বেতন পাই তা দিয়ে কোনোমতে চলছি। এই অবস্থায় মাসে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা বেশি বাস ভাড়া দিতে হলে কিভাবে চলব? সরকার তো জনগণের কথা ভাবেনি।’
এ ছাড়াও আয়াত পরিবহনের ভাড়াও ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কমলাপুর থেকে মিরপুর আয়াত পরিবহনের ভাড়া এতদিন ৩০ টাকা থাকলেও সোমবার থেকে তা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আয়াত পরিবহনের যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, ‘২৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর কথা থাকলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৪০ শতাংশ। এটা কিভাবে সম্ভব, আমাদের তো আয় বাড়েনি। বর্ধিত ভাড়া আমরা কিভাবে দেবে?’
অন্যদিকে আয়াত পরিবহনের হেলপার মামুন বলেন, ‘সাড়ে ২৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ালে ৩০ টাকার ভাড়া ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা হয়, আমরা ৪০ টাকা নিচ্ছি। কারণ আড়াই টাকা ৩ টাকা খুচরা ভাড়া নেওয়া যায় না।’
এদিকে রাজধানীর মতিঝিল থেকে মিরপুরস-১০, ১১, ১২ পল্লবীগামী বিকল্প পরিবহনও মতিঝিল থেকে মিরপুর ভাড়া নিচ্ছে ৩৫ টাকা। আগে ছিল ২৫ টাকা।
এ ব্যাপারে বিকল্প পরিবহসের হেলপার ফয়সাল ও ইউনুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করে ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করা হোক। কারণ সকালে মিরপুর থেকে মতিঝিল আসার পথে যাত্রীদের সাথে আমাদের একাধিকবার ঝগড়া হয়েছে। যাত্রীরা আমার শার্টের কলারে ধরে লাঞ্চিত করেছে। আমরা কেন লাঞ্চিত হবো। বর্ধিত ভাড়া মালিক পাবে।’
তারা আরও বলেন, ‘চাল, ডাল, তেল ও মুরগির দাম বাড়ানো হলে কেউ তো কারো কলারে ধরে থাপ্পড় দিয়ে বলে না, দাম বাড়ানো হলো কেন। তাহলে যাত্রীরা আমাদের গাঁযে কেন হাত দিবে। আমরা তো পেটের দায়ে হেলপারি করি।’
অন্যদিকে মতিঝিল আরামবাগ থেকে সাভার, জিরাবগামী ওয়েলকাম পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক টাকাও বেশি নিচ্ছি না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কম নিচ্ছি। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের বচসা হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘মতিঝিল আরামবাগ থেকে সাভার আগে ভাড়া ছিল ৫০ টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ৬৫ টাকা।’
সারাবাংলা/জিএস/একে