‘পুলিশের চাকরি ২৪ ঘণ্টার, ৯টা-৫টা অফিস হবে না’
৮ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৩৭
ঢাকা: আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করে ৯টা-৫টা অফিসের প্রত্যাশা অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। কেউ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত থাকার চেয়ে অন্য কোথাও ‘উন্নত জীবনের’ আশা করলে তাকে সম্মানের সঙ্গে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৭/১৮ ঘণ্টা ডিউটি করেন একজন কনস্টেবল। আপনাদের সাংবাদিকদের কী ধারণা— ডিএমপি কমিশনার দুই ঘণ্টা ডিউটি করে? আমাদের তো ঘুমের সময় নেই, খাওয়ার সময় নেই। আমরা যখন চাকরিতে এসেছি, জেনে-শুনে-বুঝেই এসেছি। ২৪ ঘণ্টা ডিউটির বাহিনীতে আমি ১৭ ঘণ্টা ডিউটি করছি। ২৪ ঘণ্টাই যে ডিউটি করানো হচ্ছে না, এর জন্য সদস্যদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত! পুলিশে চাকরি করে ৯টা-৫টা অফিস সম্ভব না।
সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে ক্র্যাব-ওয়ালটন ক্রীড়া উৎসব-২০২১ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে ক্রীড়া উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশ সদস্যদের বাড়তি দায়িত্ব পালন ইস্যুতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে অনুষ্ঠানে সমালোচনা করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে তথ্যের বিভ্রাট ঘটে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বেড়িয়েছে, পুলিশের সদস্যরা বিরক্ত। ১৬/১৭ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারা অতীষ্ঠ-বিরক্ত। ডিএমপির একজন কনস্টেবলের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন, পুলিশে এলে উন্নত জীবন পাবেন। সে জীবন তিনি পাননি। বাহিনী বেআইনি খাতে টাকা নিচ্ছে, ব্যাংকের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে— অভিযোগ করেছেন তিনি।
শফিকুল ইসলাম সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বলছি— ডিএমপি’র কোনো সদস্যের কাছ থেকে একটি পয়সাও কেটে নেওয়া হয়নি। অথচ একজন কনস্টেবলের বরাতে নিউজ করা হলো!
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ওই নিউজের পর আমি দুই ঘণ্টা ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি, তোমরা যখন চাকরিতে আসছ তখন জেলায় কত জন আবেদন করেছিল? কেউ কেউ বলছে তিন হাজার। সেখানে চাকরি হয়েছে কতজনের? ৩০ জনের। তোমাদের কি জোর করে চাকরিতে আনা হয়েছিল? তারা বলেছে, না। উন্নত জীবন আশা করেছিলে, কিন্তু পাওনি? উন্নত জীবন যেখানে পাও আবেদন করো। সম্মানের সঙ্গে চাকরি থেকে তোমাদের বিদায় করে দেবো।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসএসসি পাস করে পুলিশে এসেছ। পায়ের জুতা থেকে শুরু করে মাথার টুপি পর্যন্ত সরকার বিনা পয়সায় দিচ্ছে। বিনা পয়সায় খাচ্ছ, ব্যারাকে বিনা পয়সায় থাকছ। আবার সরকার তোমাকে বাসা ভাড়াও দিচ্ছে। তুমি যেখানে যাচ্ছ, সেখানে গাড়ি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছে, খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। হ্যাঁ, মানসিক চাপ আছে। কাজ করতে গেলে এই চাপ-পরিশ্রম পুলিশে থাকেই।
‘সবকিছু মিলিয়ে আমাদের পুলিশে এসেই কনস্টেবল বেতন পাচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এই ধরনের নিউজ তথ্যের বিভ্রাট ঘটায়, যা যুক্তিসঙ্গত নয়। আর এ ধরনের নিউজের ক্ষেত্রে ডিএমপি’র রেফারেন্স দিতে হলে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেই করা উচিত,’— বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের এই প্রধান কর্তা।
তিনি বলেন, চাকরিতে ঢুকলে বেতন এমনে এমনে হয়, কাজ তো কিছু করার লাগবে না— প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এই মানসিকতা বদলাতে হবে। সম্মানবোধের সঙ্গে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে হবে। সাংবাদিকরা যদি না থাকতেন, তাহলে সরকারি চাকরি যে কী মজার হতো! আমরা চাই না এই চাকরি মজার হোক। আমরা চাই জবাবদিহিতা।
সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাংবাদিকতার জায়গাটা জবাবদিহিতার। আমার মতো কমিশনারকেও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছে সাংবাদিকরা। আমি যদি সত্যি মানুষের জন্য কল্যাণের জন্য কাজ করতে চাই, তাহলে আমার আসলে চুরি করার কিছু নেই, অবকাশেরও কিছু নেই। সাংবাদিক-পুলিশ আমরা সবাই পারস্পরিক সহযোগী হয়ে মানুষের পাশে থাকব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড মিডিয়া) হায়দার আলী খান বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের সঙ্গে একীভূত। আমাদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা সত্যকে উপস্থাপন করি।
তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে যে তথ্যের বিকৃতি ঘটে না, তা নয়। মাঝে মধ্যে ঘটে। আমরা অনুরোধ করব, সঠিক তথ্য যেন যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপন করা হয়। লেখনির মাধ্যমে জাতির বড় ক্ষতিও হতে পারে। ফেসবুক অনেক বিকৃত তথ্য ও ছবি বিকৃত করে প্রচার করা হয়। আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, যৌক্তিকভাবে তথ্য বিশ্লেষণে করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, মহৎ পেশা সাংবাদিকতায় আপনারা নিয়োজিত। প্রত্যেক সাংবাদিকই মানবাধিকারকর্মী। করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিকভাবেই বিপর্যস্ত অবস্থা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো সাংবাদিকরাও ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক গভীর। আমাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকা উচিত না।
তিনি বলেন, সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। এটি যেমন আশার দিক, তেমনি গুজবের কারণে বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগও রয়েছে। সেদিকে খেয়াল রেখে সাংবাদিকদের আরও বেশি যত্নশীল ও সচেতনভাবে সংবাদ পরিবেশনে অনুরোধ জানান তিনি।
ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্র্যাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাইফ বাবলু। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। তাদের গ্রেফতার করে যে আইনেই মামলা হোক না কেন, মাদক আইনেও মামলা করা হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
ক্র্যাব-ওয়ালটন ক্রীড়া উৎসব-২০২১ ডিএমপি কমিশনার পুলিশ বাহিনী মোহা. শফিকুল ইসলাম