‘শহরের মানুষের শোক ও মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কম’
৮ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৩৪
ঢাকা: গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের মধ্যে কমিউনিটি সাপোর্ট ও সামাজিক বন্ধনের অভাব এবং বৈরী পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তাদের মধ্যে মৃত্যুশোক সামলানোর ক্ষমতা ও অন্যান্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম। তবে গ্রাম বা শহর— উভয় পরিবেশের মানুষের মধ্যেই এসব সমস্যা বৃদ্ধি বেড়েছে। তাই সব মানুষের জন্যই উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সমর্থন প্রয়োজন।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. সাদিয়া আফরিন এ কথা বলেন।
ডা. সাদিয়া বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও ২০২০ সালের মাঝামাঝি এসে এর প্রকোপে সারাবিশ্ব প্রায় থমকে যায়। পারিপার্শ্বিক জীবন, রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর প্রকোপ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশের মানুষের জনজীবনও।
আরও পড়ুন- করোনায় স্বজনহারাদের মনের ক্ষত সারাবে ‘কথা বলো, কথা বলি’
তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানীর সব মানুষ এক অনিশ্চয়তার সামনে বেসামাল হয়ে থমকে যান। করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে এই ধকলের মুখে সবচেয়ে বেশি পড়তে হয়েছে।
এক গবেষণার ফল তুলে ধরে ডা. সাদিয়া বলেন, করোনায় হতাশা ও বিষন্নতা ছাড়াও মানুষের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাক, শুচিবায়, আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ, নিদ্রাহীনতা, মাদকাসক্তিসহ নানা মানসিক সমস্যার প্রকোপ বেড়ে যায়। মানসিক রোগ নিয়ে কাজ করা পেশাজীবীরা অনুভব করেন যে মানসিক রোগের আরেক ঢেউ মানবজাতির ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এই ঢেউয়ে করোনায় স্বজন হারানো পরিবারের মানুষগুলোকে কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭ হাজারের বেশি মানুষ। দেখা যায়, গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের মধ্যে কমিউনিটি সাপোর্ট, সামাজিক বন্ধন, বৈরী পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তাদের মধ্যে মৃত্যুশোক সামলানোর ক্ষমতা ও অন্যান্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। কিন্তু গ্রাম বা শহর উভয় পরিবেশের মানুষের মধ্যেই এসব সমস্যা বেড়েছে। তাই সব মানুষের জন্যই উপযুক্ত মানসিক সমর্থন প্রয়োজন।
এদিন করোনায় স্বজনহারাদের বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হয় বিএসএমএমইউতে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মনের খবরে’র এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকিয়াট্রি রেসিডেন্টস ও সাইকোলজিস্টরা করোনায় স্বজনহারা ব্যক্তিদের বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, মনোরোগবিদ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান, মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লবসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর