মেঘনা নদী ভরাট কেন জনস্বার্থবিরোধী নয়— হাইকোর্টের রুল
৯ নভেম্বর ২০২১ ০৯:২৭
ঢাকা: মেঘনা নদী ভরাট করে চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। এই কাজ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৮ নভেম্বর, ২০২১) পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকসহ ১৮ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন মোহাম্মদ আশরাফ আলী।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর ও সোনারামপুর মৌজায় প্রবাহিত মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খালবিবাদীগণের অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাটের মাধ্যমে দখল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে ও অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাট থেকে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের ওপর রুল জারি করেছেন আদালত।
সেই সঙ্গে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খালভরাটের কার্যক্রম ও ওই স্থানে এপিএসসিএল কর্তৃক যেকোন স্থাপনা নির্মাণের উপর ৩ (তিন) মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত।
এছাড়া বিবাদীদের পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসককে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে অবৈধভাবে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাটের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) কর্তৃপক্ষ সোহাগপুর ও বাহাদুরপুর মৌজায় মেঘনা নদীর পাড় ও নদীর ভেতরের শত শত একর জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করছে মর্মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এপিএসসিএল তাদের নিজস্ব জায়গা ভরাট করছে মর্মে দাবি করলেও বিআইডব্লিউটিএ এবং পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জায়গাটি পরিদর্শন করে ভরাট করা জায়গা নদীর বলেই তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বালু ভরাট অংশের পশ্চিম-উত্তর পাশ দিয়ে সোহাগপুর গ্রামের দিকে বড় খাল গেছে।
সম্প্রতি বেলা প্রতিনিধিদের সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতীয়মান হয়, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এপিএসসিএলের রেস্টহাউস। এর পেছনে সীমানাপ্রাচীর থেকে নদীর দিকে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট প্রস্থের ও দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের নতুন করে দেয়াল নির্মাণ করে বালু ভরাট করা হয়েছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কৌশলে কেন্দ্রের রেস্টহাউসের পেছনে নিজেদের সীমানা প্রাচীরের বাইরে মেঘনা নদীর পাড়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করেছে। মেঘনা নদী থেকেই বালু উত্তোলন করে নতুন সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ফেলে পাড় ভরাট করে জায়গা দখলে নিয়েছে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ।
এতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন,আশুগঞ্জ নৌবন্দর এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন, মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চরসোনারামপুর গ্রামটি নদীতে বিলীন, গ্রামটিতে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার মৎস্যজীবী পরিবার তাদের বাসস্থান, আশুগঞ্জ এলাকার একমাত্র শ্মশান এবং চরে অবস্থিত ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
এ অবস্থায় মেঘনা নদী ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল-নদী রক্ষার নিমিত্তে বেলা জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও