এস কে সিনহার ১১ বছর কারাদণ্ড
৯ নভেম্বর ২০২১ ১৩:১৯
ঢাকা: চার কোটি টাকা ঋণ দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পৃথক দুই ধারায় মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একটি ধারায় সাত বছর ও অন্য একটি ধারায় চার বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি সাজা একত্রে চলমান থাকবে। ফলে তাকে সাত বছর কারা ভোগ করতে হবে। এছাড়াও মামলার অপর ১০ আসামির মধ্যে আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী শান্ত্রী রায়। এর মধ্যে এ কে এম শামীমকে চার বছর ও বাকিদের ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
এসকে সিনহার পাচারের মামলায় ৭ বছর কারাদণ্ড ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনদায়ে আরও ৬ মাস কারাদণ্ড এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৪ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে। মামলার আরও ৮ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে চার বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাস কারাগারে থাকতে হবে।
ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে ৩ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও ৩ মাস কারাগারে থাকতে হবে।
ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন ও ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারীকে ৩ বছর কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস কারাগারে থাকতে হবে।
আসামি মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতি কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। অপর ৬ আসামি জামিনে ছিলেন। তারা আদালতে হাজির হন।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদক এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ গত ৫ অক্টোবর ধার্য করেন। কিন্তু ওইদিন বিচারক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ২১ অক্টোবর ধার্য করা হয়।
গত ২৯ আগস্ট মামলাটিতে পলাতক আসামিরা ছাড়া আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। গত ২৪ আগস্ট মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
গত বছরের ১৩ আগস্ট বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলাটির চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এছাড়া জামিনে রয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী শান্তি রায় পলাতক রয়েছেন।
মামলার তদন্তের সময় এজাহারভুক্ত আসামি মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেলে তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর ও আত্মসাতের অভিযোগে দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এরপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের হাজির হতে নির্দেশনা দেন।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১-এ এই মামলাটি দায়ের করেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ এ চার্জশিট দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে চার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ তৈরি করে তা একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে আসামি এস কে সিনহার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরে এস কে সিনহা নগদ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সারাবাংলা/এআই/এএম