Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিবৃতি প্রত্যাহার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলল ইসকন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২১ ২০:২০

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ছবি: সারবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা অস্বীকার করে বিবৃতি দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বিভিন্ন ধর্মীয় ও মানবাধিকার সংগঠন। চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতা, পুরোহিত হত্যা, লুটপাট, মন্দির ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের উৎসাহিত করেছে। এই বক্তব্যের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, ইসকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।

দুর্গাপূজা চলাকালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় কেউ ধর্ষিত হয়নি, একটি মন্দিরেও অগ্নিসংযোগ কিংবা ধ্বংস করা হয়নি। ধর্মীয় সহিংসতায় এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে চারজন মুসলমান। হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হন। দুজন হিন্দু মারা যান, যাদের মধ্যে একজনের সাধারণ মৃত্যু হয়েছে। অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘কল্পনাপ্রসূত, বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ প্রকৃত অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে অপরাধীদের গ্রেফতার করছে, মূলহোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি সহিংসতাকারী ও অপরাধীদের উৎসাহিত করছে। সারাবিশ্বের সমস্ত অসাম্প্রদায়িক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর লোক এই ঘটনার নিন্দা করছে, সেখানে মন্ত্রী তা স্বীকারই করলেন না। সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত সহিংসতার স্বীকার সনাতনী জাতিগোষ্ঠী এরকম বক্তব্য প্রত্যাশা করেনি।’

বিজ্ঞাপন

‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্থ মস্তিষ্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার ব্যক্তি ও জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের সঙ্গে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ তামাশা করেছেন। সমবেদনার পরিবর্তে তিনি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছেন। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বর্ণনা দিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৩ অক্টোবর কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর পাড় এলাকায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে একইদিন চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বৈলতলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, কক্সবাজারের পেকুয়া, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ, বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল, সিলেটের জকিগঞ্জ, হাটহাজারীর সরকারহাট, কুড়িগ্রামের কালুডাঙ্গা, হাতিয়ার নলছিড়াসহ বিভিন্নস্থানে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।

ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৪ অক্টোবর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও বান্দরবানের লামা উপজেলায় সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ১৫ অক্টোবর প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ১৯৭১ সালের চেয়েও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা হয় নোয়াখালীর চৌমুহনীতে প্রত্যেকটি হিন্দু মন্দির, শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে।

ঘটনার পর পর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেকটি মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতদের শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত মঠমন্দির সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুনরায় নির্মাণ ও বাড়িঘর-দোকানপাট পুনর্নির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যা বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা।

এ সময় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য্য, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর কমিটির সহ সভাপতি দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

ইসকন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর