বিনা ভোটে ৮১ চেয়ারম্যান, নির্বাচন-ই হচ্ছে না ৫ ইউপিতে!
১০ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৩৪
ঢাকা: দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৬টি ইউপি‘র মধ্যে ৮১ জনই বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। দেশের ১৮টি জেলার ২৮টি উপজেলায় এসব প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এছাড়া কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলায়ও কোনো ভোট নেওয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির মধ্যে ৬৯জন চেয়ারম্যান ভোটের আগে নির্বাচিত হন। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেন। ইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে ইসির যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল ১১ নভেম্বর ৮৪৬টি ইউপিতে নির্বাচনের কথা থাকলেও নির্বাচন হচ্ছে ৮৩৬টিতে। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সব কয়টিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সব পদে একক প্রার্থী থাকায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে লাকসামে ওই ইউপিতে কোনো নির্বাচন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম, নেত্রকোণা সদর উপজেলার মদনপুর, টাঙ্গাইলে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া এবং শরীয়তপুর সদর উপজলার চিতলিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আগামীকাল দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৬টি ইউপি নির্বাচন হচ্ছে।’
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের তালিকা দেখুন এখানে—
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে, ‘দেশে নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। ফলে কোথা থেকে কে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিংবা নির্বাচনের মাধ্যমে কে নির্বাচিত হয়েছেন- এতে কারও কিছু আসে যায় না। কারণ এই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এই নির্বাচন নিয়েও জনগণের কোনো আগ্রহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এক তরফা নির্বাচন হচ্ছে। এই ধরনের নির্বাচন নিয়ে কথা বলারও কিছু নেই। এক কথায় বলব, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধবংস করে দিয়েছে। জনগণের কাছে নির্বাচন শব্দটি হাস্যরসে পরিণত হয়েছে।’
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ৬২টি জেলায় ৮৪৬ ইউপির মধ্যে আগামীকাল নির্বাচন হচ্ছে ৮৩৬টিতে। এর মধ্যে ১৮ জেলার ২৮ উপজেলায় ৮১ জন চেয়ারম্যান একক প্রার্থী হওয়ায় তারা সবাই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া উপজেলায় ৫ জন, ভোলার দৌলতখান ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ১ জন করে, নারায়ণেগঞ্জ সদরে ২ জন, রুপগঞ্জে ৩ জন, শেরপুর সদরে ৩ জন, টাঙ্গাইল ধনবাড়িতে ৩ জন, জামাপুর সদরে ৫ জন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ৩ জন, কুমিল্লা লাকসামে ৫ জন, তিতাসে ১ জন, মেঘনায় ১ জন করে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়াও চাঁদপুর সদরে ২ জন, ফেনী ফুলগাজীতে ৩ জন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১ জন, মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে ১ জন, শরীয়তপুর সদরে ৩ জন, খুলনা ১ জন, মাগুরা সদরে ৩ জন, যশোর চৌগাছা ২ জন, বাগেরহাট সদরে ৩ জন, মোল্লারহাটে ১ জন, জয়পুরহাটের হাক্কেলপুরে ১ জন, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৩ জন, সদরে ৩ জন, চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ডে ৫ জন, মীরসরাই ১৩ জন এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে তিন ধাপে ২ হাজার ২২০টি ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৬৯ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ৮৩৬টি ও তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৩ ইউপিতে আগামী ২৮ নভেম্বর ভোট হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার ইউপিতে ভোট করা যাবে। মামলা জটিলতার কারণে বেশ কিছু ইউপিতে ভোট গ্রহণ আটকে আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে নয় বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। চলতি ২০২১ সালে জুন/জুলাই মাস থেকে শুরু হয়েছে দশম ইউপি নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে নবম ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে চার হাজার ২৭৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম