নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নূর হোসেন হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি
১০ নভেম্বর ২০২১ ১৮:১০
ঢাকা: নিরপেক্ষে তদন্তের মাধ্যমে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহিদ নূর হোসেনের হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
তিনি বলেন, কেন নূর হোসেনকে হত্যার পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলো না? আজ দেশের মানুষ জানতে চায়, কেন নূর হোসেন হত্যায় মামলা হলো না। ১৯৯১ সালের পর সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু নূর হোসেন হত্যায় মামলা হলো না কেন?
বুধবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে জাতীয় পার্টির দুর্নাম করতেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নূর হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। নূর হোসেন বুকে ও পিঠে যে স্লোগান লিখেছিলেন, আজ আমরাও সেই স্লোগান দিচ্ছি। আজ আমরাও বলছি, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। আমরা নূর হোসেন হত্যার বিচার চাই।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, সরকার দেশের মানুষের কষ্ট বোঝে না বলেই অযৌক্তিকভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার পরিবহন খাতের সঙ্গে নাটকের মাধ্যমে ধর্মঘট ডেকে সড়ক ও নৌপথের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাড়া যা বাড়িয়েছে, তার প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে গণপবিরহনগুলো। কিন্তু দেখার কেউ নেই। অসহনীয় কষ্টে আছে দেশের মানুষ। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের আরও বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে। কিন্তু তেলের দাম কমলে তখন তো দেশে তেলের দাম কমানো হয় না! করোনাকালে অনেক কম দামে তেল কিনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করেছে সরকার। কিন্তু এখন ভতুর্কি দিয়ে হলেও তেলের দাম কমাতে হবে।
বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়লেও জাতীয় পার্টির আমলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনোই তেলের দাম বাড়াতেন না উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, তিনি সবসময় ভতুর্কি দিয়ে তেলের দাম মানুষের সামনে সহনীয় পর্যায়ে রেখেছেন। বর্তমান বাস্তবতায় তেলের দাম বাড়ানো গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।
গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর সামরিক আইন তুলে দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করেছেন। ১৯৯১ পরে দু’টি দল গণতন্ত্রের নামে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। গণতন্ত্রের কথা বলে জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি।
অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ ফিরিয়ে দেওয়াই জাতীয় পার্টির রাজনীতির লক্ষ্য।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে যিনি দলের প্রধান, তিনিই প্রধান নির্বাহী। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে নিজ দলের সংসদ সদস্যরা সরকারের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য। আবার ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বিচার বিভাগ প্রচ্ছন্নভাবে সরকারের অধীনে। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী আইন না করার কারণে নির্বাচন কমিশনও গঠন হয় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দেশে গণতন্ত্র চর্চা চলে না, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়।
জাতীয় পার্টির এখনকার রাজনীতির উদ্দেশ্য তুলে ধরে চুন্নু বলেন, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করব। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাব। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, শহিদ সোহরাওয়ার্দীর পরই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। গণমানুষের ভলোবাসা নিয়ে আগামী দিনে জাতীয় পার্টি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়। দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও নাজমা আখতার; উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রওশন আরা মান্নান, সেলিম উদ্দিন ও হেনা খান পন্নি; ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওমর ও এইচ এম আসিফ শাহরিয়ার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেরিফা কাদের, ড. নুরুল আজহার শামীম, মনিরুল ইসলাম মিলন, ড. গোলাম মোস্তফা, আমানত হোসেন আমানত, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন তাপস, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জুসহ পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর