Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ নভেম্বর ২০২১ ২০:২৩

বগুড়া: বগুড়ায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নেওয়ার ট্রলি ভাড়া (অবৈধ) চাহিদার চেয়ে কম দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশ চন্দ্র (১৭) নামে এক স্কুল ছাত্রের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার পর তার মৃত্য হয়েছে। দাবিকৃত ভাড়ার ৫০ টাকা কম দিয়েছিলে তার পরিবার। মঙ্গলবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় বিকাশ আহত হয়েছিলেন। রাতে জরুরি বিভাগে ভর্তির পর সেখান থেকে ওয়ার্ডে নেওয়ার পর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের অনিয়মিত কর্মচারী আসাদুজ্জামন ধলু ওই রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ট্রলিতে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সে পলাতক রয়েছে।

এ ঘটনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুধবার ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ওই কর্মচারী ক্লিনার পদে দিনমজুরভিত্তিক কর্মরত ছিল।

জানা যায়, গাইবন্ধার সাঘাটা উপজেলার পুটিমারী এলাকার বিশু চন্দ্র কর্মকারের ছেলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র লেখা পড়ার সঙ্গে বিভিন্ন কাজ করে আসছিল। সোমবার রাত ৮ টায় বাইসাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে সাঘাটায় মটরসাইকেলের ধাক্কায় মাথায় গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাত ১০ টার দিকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারণে জরুরি বিভাগ থেকেই তাকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের তিন তলায় নিউরো সার্জারি ইউনিটে নেওয়ার জন্য ট্রলি আনা হয়। হাসপাতালের কর্মচারী আসাদুজ্জামান ধুলু ট্রলিতে বিকাশকে ওয়ার্ডে নেওয়ার জন্য ২শ টাকা চান।

আরও পড়ুন: বকশিস না পেয়ে অক্সিজেন খুলে নেওয়ায় হাসপাতালে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

ওয়ার্ডে নিয়ে বিছানায় রাখার পর হাসপাতালের ওই কর্মচারী বিকাশের পিতা বিশু চন্দ্রের কাছে টাকা চাইলে তিনি ১৫০ টাকা দিয়ে জানান, তিনি গরিব। তার কাছে আপাতত কোনো টাকা নেই। কিন্তু হাসপাতালের ওই কর্মচারী বিয়য়টি মানতে রাজি হয়নি। ট্রলি ভাড়া কম দেওয়ায় ওই কর্মচারী এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে। এর কিছু সময়ের মধ্যেই বিকাশ মারা যায়।

বিজ্ঞাপন

তার বাবা বিশু জানান, তারা দরিদ্র, তার নিকট ১৫০ টাকা ছিল। তিনি অনুরোধ করেছিলেন। তারপরেও তার ছেলের মাস্ক খুলে নেওয়া হয়। এ কারণেই তার ছেলে মারা যান বলে জানান। এ ঘটনার পরেই হাসপাতালের অন্য লোকজনসহ বিকাশের পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

খবর পেয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মহসীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তবে ওই ঘটনার পর পরেই হাসপাতালের কর্মচারী আসাদুজ্জামান ধুলু পালিয়ে যান।

বুধবার হাসপাতালের পরিচালক জানান, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যপারে তারা পুলিশ ও র‌্যাবকে জানিয়েছেন। অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে বলেন, আসাদুজ্জামান ক্লিনার পদে অনিয়মিত কর্মচারী হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. ওয়াদুদ জানিয়েছেন, বুধবার ঘটনা তদন্তে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মনির আলী আকন্দকে প্রধান করে ৪ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইনডোর মিডিক্যাল অফিসার ডা. মাহবুব আজাদ, স্টাফ নার্স আব্দুল বারেক ও ওয়ার্ড মাস্টার তৈয়বুর রহমান। বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানিয়েছেন, স্কুলছাত্র বিকাশের পরিবার মামলা করতে অনীহা জানালেও তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত কর্মচারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীবহনের ট্রলি বা হুইলচেয়ার ভাড়া নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। হাসপাতালে রোগী এলেই এক শ্রেণির কর্মচারী ট্রলি ও হুইল চেয়ারের ভাড়া বাবদ ২/৩ শ টাকা নেয়। টাকা না দিলে রোগী বহনের জন্য কিছু পাওয়া যায় না। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও একটি চক্রের এই কর্মকাণ্ড থেমে নেই।

সারাবাংলা/একে

অক্সিজেন মাস্ক বগুড়া মেডিকেল স্কুলছাত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর