Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিপিবি’র রাজনৈতিক দলিলের কেন্দ্রে সাংগঠনিক শক্তিমত্তা ও শৃঙ্খলা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৪৫

ঢাকা: আগামী ফেব্রুয়ারির কংগ্রেসকে ঘিরে জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)। এরই মধ্যে কংগ্রেস সামনে রেখে রাজনৈতিক রণকৌশলের দলিলের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া এই দলিল বলছে, সিপিবি’র বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলার ঘাটতিও রয়েছে। আর সে কারণেই দলীয় শক্তিমত্তা বাড়ানো ও দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকেই এই দলিলে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সিপিবি’র দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক রণকৌশল দলিলে সিপিবি’কে সত্যিকার অর্থে বিপ্লব ও শ্রেণিসংগ্রামের দল হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দলটিকে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষায় গণভিত্তিসম্পন্ন দল হিসেবে গড়ে তোলার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এর জন্যই সিপিবি’র নিজস্ব শক্তি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে রজনৈতিক রণকৌশল দলিলে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কংগ্রেস সফল করার জন্য বিরামহীন বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। কংগ্রেসের আগে দলটির সব ইউনিট ও জেলা-উপজেলা-থানা শাখা মিলিয়ে প্রয় দেড় হাজার সম্মেলন করা হবে। আর এরপরই ফেব্রুয়ারিতে হবে কংগ্রেস। সেই কংগ্রেসে এই রাজনৈতিক রণকৌশল দলিল পাস করা হবে। এরপর এই দলিল অনুযায়ী সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করবে দলটি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক রণকৌশল দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, দলটির নিজস্ব শক্তি বাড়তে হবে। পার্টির শক্তি-সামর্থ্য, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের সবচেয়ে পরীক্ষিত ও দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পার্টি হিসেব সিপিবির দায়িত্ব অনেক। সেজন্য পর্টিকে সত্যিকার অর্থে বিপ্লব ও শ্রেণিসংগ্রামের পার্টি, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের পার্টি এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষায় গণভিত্তিসম্পন্ন পার্টি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন- ফেব্রুয়ারিতে সিপিবি’র কংগ্রেস, পরিবর্তন আসছে মূল নেতৃত্বে

দলিলে বলা হয়েছে, মৌলিক কাজ অগ্রসর করার জন্য পার্টিকে প্রধান উদ্যোগী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। মেহনতি শ্রেণির পাশাপাশি সমাজের সব স্তরে ও সব মহলে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সন্ত্রাসী হমালা বা রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে মোকাবিলাসহ নানা জটিল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক কাজ এগিয়ে নিতে পারদর্শী হতে হবে। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকে লড়াকু ভূমিকা রাখতে হবে। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে নানা ইতিবাচক ও গঠনমূলক কাজ এগিয়ে নিতে সমর্থ একটি সুশৃঙ্খল বিপ্লবী সংগঠন হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টিকে গড়ে তুলতে হবে।

রাজনৈতিক এই দলিলে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পাঁচটি কাজের নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে— বর্তমানের লুটেরা-বুর্জোয়া ধারার দ্বি-মেরুভিত্তিক শক্তি সমাবেশের বাইরে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মতো সমর্থ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং জনগণের আস্থাভাজন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা হবে সিপিবি’র লক্ষ্য। রাজনীতি ও সমাজের বর্তমান শাসক-শোষক শ্রেণির আধিপত্য খর্ব করে শ্রমজীবী মানুষসহ ব্যাপক হারে জনগণের শ্রেণিগত ও অন্যান্য ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে পরিচালিত শ্রেণিসংগ্রাম ও গণসংগ্রামের ধারায় তাদের সচেতন ও সংগঠিত করে এই বিকল্প শক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এছাড়া দেশবাসীর সামনে গণমুখী প্রগতিশীল জাতীয় স্বার্থ অনুকূল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবী ধারার বিকল্প কর্মসূচির উপস্থাপন ও তাকে জনপ্রিয় করে তোলা; সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ট প্রবণ শক্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টাকে গুরুতর বিপদ বলে বিবেচনা করে এ ধরনের শক্তির বিরুদ্ধে নিরবিচ্ছন্ন সংগ্রামে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন; এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে, বিশেষভাবে বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক ধারায় সংগ্রাম গড়ে তোলাও হবে সিপিবি’র অন্যতম দায়িত্ব।

কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় এক জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, দলটির মধ্যে গত বছর ও তার আগে বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। একজন নারী নেত্রী হয়রানি নিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগও করেছেন। দলটির ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা এর আগে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। স্পষ্টতই দলে আগের মতো শৃঙ্খলা নেই। নিজস্ব শক্তিও নেই। আগের মতো বিপ্লবীও নয়।

দলের অভ্যন্তরীণ এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, সমাজের অবক্ষয় হয়েছে। তারই প্রভাব পড়েছিল সিপিবিতে। আন্দোলন-কর্মসূচিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। নিজস্ব শক্তি বিকাশের কথা বলা হয়েছে। সিপিবি দুর্বল হয়ে পড়েছে— এ তথ্য ঠিক নয়।

রাজনৈতিক রণকৌশল দলিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই সিপিবি নেতা বলেন, দলের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিনের পথচলার কৌশল নির্ধারণ করতেই এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি সিপিবি’র জেলা শাখাসহ সব সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। এর কংগ্রেসে এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। আগামী দিনে এই দলিল অনুযায়ীই চলবে সিপিবি।

এদিকে, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী আনার প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছিল কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংশোধনী আনার প্রস্তাবও আসছে বিভিন্ন ইউনিট ও শাখার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় কংগ্রেস বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক রণকৌশল দলিল সিপিবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর