জাল দলিল বানিয়ে খ্রিষ্টান পরিবারের ভিটেবাড়ি দখলের অভিযোগ
১১ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজারে জাল দলিল বানিয়ে জাকির হোসেন চৌধুরী নামে এক ‘ভূমিদস্যু’ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী একটি পরিবারের ভিটেবাড়ি দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে এ সংক্রান্ত মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু ওই পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের মধ্য দিয়ে পিবিআই কার্যত ভূমিদস্যুর পক্ষ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা জুন রড্রিক্স। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে ডেরেল রড্রিক্স।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নগরীর লালখানবাজারে ১৯৭৪ সালে জুন রড্রিক্সের স্বামী স্থানীয় রৌশন আরা খাতুন ও তোমিজা খাতুন নামে দুই বোনের কাছ থেকে দুই গণ্ডা সম্পত্তি কেনেন। সম্প্রতি জাকির হোসেন নামে স্থানীয় এক ভূমিদস্যু জুন রড্রিক্সদের দখলে থাকা আধাগণ্ডা জায়গা কিনেছেন দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করেন। এসময় জাকিরের পক্ষ থেকে ১৯৯৭ সালে রৌশন আরার মেয়ে নুর বেগমের কাছ থেকে জায়গা কেনার দলিল সরবরাহ হয়।
জুন রড্রিক্সদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হলে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হয়। এসময় খুলশী থানা পুলিশও ভূমিদস্যুর পক্ষ নিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ডেরেল রড্রিক্স বলেন, ‘যে জায়গা আমরা ১৯৭৪ সালে রৌশন আরার কাছ থেকে কিনেছি, সেই জায়গা আবার তার মেয়ে ১৯৯৭ সালে কিভাবে বিক্রি করল— এটা আমাদের বোধগম্য হয়নি। আমরা আদালতে মামলা করি। খুলশী থানা পুলিশ তদন্ত করে জাকিরের সব দলিল জাল বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আমরা এই দলিল বাতিলের জন্য আবার আদালতে মামলা করি। এছাড়া জালিয়াতির মামলাও করি। আদালত জালিয়াতির মামলা পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু পিবিআই নুর বেগমের পক্ষ নিয়ে একটি পক্ষপাতমূলক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আমরা ওই তদন্তের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য জাকির হোসেনের লোকজন এসে বারবার হুমকি দেয়, হামলার চেষ্টা করে। সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে অভিযোগ করার পরও তারা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাবেক শিক্ষিকা জুন রড্রিক্স বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অসহায় নিরীহ মানুষ। চোখের সামনে ভূমিদস্যুরা ভিটেমাটি দখল করে নিচ্ছে। চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। সংখ্যালঘু হওয়া কি আমাদের অপরাধ? কার কাছে গেলে আমাদের ভিটে আমরা রক্ষা করতে পারব, জানি না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে জুন রড্রিক্সের মেয়ে ডরিন পিনেরু এবং ছেলে ডাগলাস রড্রিক্সও ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর