Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামি রুম্মান, ইভানার মাকে ফোনে হুমকির অভিযোগ

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ নভেম্বর ২০২১ ২০:২০

ঢাকা: ইংরেজি মাধ্যম স্কলাসটিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কর্মকর্তা ইভানা লায়লা চৌধুরী হত্যা মামলার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান ওরফে রুম্মান ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তবে এর মধ্যেই ইভানার পরিবার থেকে অভিযোগ এসেছে, রুম্মান ফোনে ইভানার মাকে হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী। জীবনের নিরাপত্তার আশঙ্কায় বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

আলোচিত ইভানা লায়লা চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনা ও হত্যার অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় দুই আসামির মধ্যে ডা. এম মুজিবুল হক মোল্লা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। কিন্তু জামিন শুনানির আগেই মামলার ১ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান ওরফে রুম্মান হাইকোর্ট থেকে জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। অভিযোগ রয়েছে— এরপর তিনি নিম্ন আদালতে হাজির হননি, জামিনও নেননি। এর মধ্যে তাকে হাইকোর্টেও প্র্যাকটিস করতে দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রুম্মানের জামিন নিয়ে কিছু ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেননি, উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনও নেননি তিনি। তবে উচ্চ আদালত থেকে তিনি ‘বিশেষ’ একটি আদেশ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন- মামলা নেয়নি শাহবাগ থানা, আদালতে যাবে ইভানার পরিবার

শাহবাগ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার বাদী ইভানার বাবার অভিযোগ— দ্বিতীয় আসামি জামিনে থাকলেও প্রধান আসামি রুম্মান জামিন পাননি, এমনকি নিম্ন আদালতেও হাজির হননি। কিন্তু শাহবাগ থানা পুলিশ রুম্মানকে গ্রেফতার বা আটক করছে না। একজন আসামি নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগে ইভানার মাকে রুম্মান হুমকি দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে।

ইভানার পরিবার জানিয়েছে, রুম্মান নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পরিচিতজনদের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিজের আইডি থেকে চরমভাবে প্রতিশোধের হুমকি দিচ্ছেন।

ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সে যদি আজ গ্রেফতার হতো, তাহলে এই হুমকি দেওয়ার সাহস পেত না। বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন- চিকিৎসকসহ ইভানার স্বামী ও প্রেমিকার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

রুম্মানের জামিন বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মান চৌধুরীর ব্যক্তিস্বাধীনতায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে।’ সেটি কি জামিন আদেশ?— এ প্রশ্নের জবাবে এসআই আব্বাস বলেন, ‘এটি জামিন নয়। তবে জামিন টাইপের একটি আদেশ।’ এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

রুম্মানের হুমকি বিষয়ে গত ৭ নভেম্বর দায়ের করা জিডিতে ইভানার বাবা লিখেছেন, প্রায় ১০ বছর আগে ইভানার সঙ্গে রুম্মানের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দু’টি ছেলে আসে। তারপরও ইভানাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই ছেলে আরমান ও আয়মান আমাদের বনানীর বাসায় লালিত পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আসামি রুম্মান বাচ্চা দু’টিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি ও নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে— গত ৪ নভেম্বর রাতে ইভানার মাকে টেলিফোনে ফোন করে বাচ্চা দু’টিকে বনানীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় রুম্মান। কিন্তু বাচ্চা দু’টি আমাদের কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। তারা বাবার কাছে যেতে চায় না। বাচ্চা দুটিকে নিয়ে গেলে তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

আরও পড়ুন- ইভানার মৃত্যু: আগাম জামিন পেলেন ডা. মুজিবুল হক

সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে রুম্মানের দেওয়া হুমকির একটি স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সারাবাংলার হাতে এসেছে। এক ছেলের ছবি পোস্ট দিয়ে রুম্মান লিখেছে, আমার ও আমার ছেলে আয়মানের বিরুদ্ধে সস্তা জনপ্রিয়তায় যারা মাঠে নেমেছেন, তাদের বলতে চাই— আমি কোনোদিন তাদের ভুলব না, এমনকি ক্ষমাও করব না। আমি বিশ্বাস করি না— আমাকে যা দিচ্ছেন তা আমি কোনো দিন ফেরত দিতে পারব না। বরং আমি প্রতিটি বিষয়ে প্রতিশোধ হিসেবে তার প্রতিদান ফেরত দেবো, এমনকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করলেও। আমি যদি কাউকে খুঁজেও না পাই তাহলে তাদের কোনো ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবো। আমার বিরুদ্ধাচারণকারী প্রত্যেকের ওপর প্রতিশোধ নেব। এটি আমার ছেলে ও তার বাবার কসম।

আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, রুম্মানের বিভিন্ন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জিডি করেছি। থানা পুলিশ জিডি নিয়েছে। ‍পুলিশ বলেছে, বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবে।

আরও পড়ুন- ইভানার স্বামীর দেশ ছাড়ার আশঙ্কা, সব ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পুলিশের

হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন শাকিল বুধবার (১০ নভেম্বর) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ জিডির কপি হাতে পেয়েছি। বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু করব। টেলিফোন ছাড়াও নাকি তিনি একটি হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি একটি মামলার আসামি, সেটিও শুনেছি। সবকিছু মাথায় নিয়ে তদন্ত করতে বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’

রুম্মানের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসিফ বিন আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে— হুমকি কেউ কাউকে দিতে পারেন না। এটি ফৌজদারি অপরাধ। রুম্মানের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন। তিনি তো আরও পারেন না। এরপরও রুম্মান সাহেব জামিন পেয়েছেন কি না, জানি না। যেহেতু থানা পুলিশ বলেছে, জামিন সংক্রান্ত একটি আদেশ আছে, তবু জামিন পেলেও তিনি প্রকাশ্যে কাউকে হুমকি দিতে পারেন না। তিনি টেলিফোনে ও ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, তাতে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপক্ষের উচিত উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করা। কারণ জামিন পাওয়ার পর হুমকি দেওয়া মানে জামিনের অপব্যবহার করা।’

আরও পড়ুন- ইভানার মৃত্যু: হাইকোর্টে স্বামীর আগাম জামিন আবেদন

তিনি আরও বলেন, ‘জামিন পাওয়ার পর প্রথমে জামিনের কপি বিচারিক আদালতে দাখিল করতে হবে। এটি তার প্রথম কাজ। কিন্তু রুম্মান সেটিও করেননি বলে জানা গেছে। এসব কাজ রুম্মানের ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। একজন আসামি ইভানার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ইভানার বাবা জিডি করেছেন। আশা করছি, পুলিশ উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

ইভানা হত্যা মামলার সার্বিক তদন্তের অগ্রগতি কী— জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্বাস আলী বলেন, ‘তদন্ত অব্যাহত আছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। সবকিছুই দেরি আছে। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতেও অনেক দেরি হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে/টিআর

ইভানা হত্যা ইভানা হত্যা মামলা ব্যারিস্টার রুম্মান স্কলাস্টিকা স্কুল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর