চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ‘মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে’ বিবৃতি দেওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ঐক্য পরিষদসহ ‘সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার’ ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।
সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘দুর্গাপূজার সময় যে সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হলো, আজও অব্যাহতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেটি চলছে। এই হামলা যখন অব্যাহতভাবে চলছে, এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে পত্রপত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে, এগুলো চলমান প্রোপাগাণ্ডা এবং এই ঘটনায় যে ছয় জন নিহত হয়েছেন তার মধ্যে চার জন মুসলিম, বাদবাকি দু’জন হিন্দু। দু’জনের মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেছেন— একজনের মৃত্যু স্বাভাবিক, আরেকজনের মৃত্যু পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে।’
‘বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন— কোনো মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি, ২০টি বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যম ও ব্যক্তি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মনগড়া কাহিনী প্রচার করছে সরকারকে হেয় করার জন্য। জানতে পেরেছি, মাদকাসক্ত একজন পবিত্র কোরআনের একটি কপি দেবতার পায়ের কাছে রেখে দিয়ে যায়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘গত ১৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৭টি জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলায় ১১৭টি মন্দির ও পূজা মণ্ডপ, ৩০১টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে চার জন ছাড়াও পাঁচ জন হিন্দু হত্যার শিকার হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে লঘু করে দেখাবার অপচেষ্টা আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে কোনোভাবেই বিবেচনায় না নিয়ে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
বিবৃতিতে পূজা মণ্ডপে কোরআন রেখে আসা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত উল্লেখ করার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিবৃতি সামগ্রিক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নির্লজ্জ অপপ্রয়াস। এসব দায় বিবেচনায় নিয়ে সমাবেশ থেকে অনতিবিলম্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের জোর দাবি জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সামগ্রিক ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার সম্পূর্ণ বিপরীত।’
‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীজুড়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকারে থাকার যোগ্যতা তিনি নির্লজ্জভাবে হারিয়েছেন,’— বলেন রানা দাশগুপ্ত।
সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণার আলোকে সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুত বিচার, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানানো হয়।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি পরিমল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, জন্মাষ্টমী ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, ঐক্য পরিষদ নেতা তাপস হোড়, প্রণবরাজ বড়ুয়া ও মিনু রাণী দেবী। সমাবেশ শেষে কেন্দ্রঘোষিত ‘ধিক্কার মিছিল’ নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।