সিটিং-গেটলক সবই আছে রজনীগন্ধ্যা বাসে
১৪ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৫১
ঢাকা: ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণার পরও রাজধানীর বাসগুলোতে সিটিং সার্ভিস এবং ওয়েবিলের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রোড রুটে চলমান রজনীগন্ধ্যা বাসে দেখা গেছে, এখনো সিটিং সার্ভিস এবং ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে শাহবাগ থেকে মোহাম্মদপুর এবং মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রজনীগন্ধ্যা বাসে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাসে উঠে দেখা গেল, শাহবাগ থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত রজনীগন্ধ্যা বাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। আগে এই ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। অন্যদিকে এই বাসে পল্টন থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, যা আগে ছিলো ১০ টাকা। আর নিউমার্কেট থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা। আবার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসার পথে শাহবাগ পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। এই রুটে রজনীগন্ধ্যার ওয়েবিল রয়েছে জিপিও, সায়েন্স ল্যাব ও মোহাম্মদপুরে।
রজনীগন্ধ্যা বাসে চলতে চলতে কথা হয় হেলপার লিমনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সিটিং সার্ভিস, গেটলক, ওয়েবিল— সবই আছে। মালিক যেভাবে চালাতে বলে সেভাবে চালাই।
এর মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কেন— প্রশ্ন করলে লিমন বলেন, আমরা দৈনিক মজুরিতে কাজ করি। মালিক গাড়িতে উঠতে না দিলে না খেয়ে মরতে হবে। আমরা নিরুপায় হয়ে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করি। যাত্রীরাও আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।
হেলপার লিমন জানালেন, রজনীগন্ধ্যা বাসটি বছিলা, মোহাম্মদপুর, শংকর, ঝিগাতলা, সিটি কলেজ, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত চলে। সব মিলিয়ে এই বাসের ভাড়া দূরত্বভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানালেন তিনি।
তবে যাত্রীরা বলছেন, এখনো এই বাসে একেক সময় একেক ভাড়া রাখা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। রজনীগন্ধ্যা বাসে করে পল্টন থেকে মোহাম্মদপুর যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল হাসান। বাস ভাড়া কেমন বেড়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালেই মোহাম্মদপুর থেকে পল্টন গিয়েছি ৩০ টাকা দিয়ে। এখন ফেরার পথে ভাড়া নিচ্ছে ৩৫ টাকা। এটা পরিবহন শ্রমিকদের মনের ওপর নির্ভর করে। তাদের যখন যেমন ইচ্ছা হয়, তারা তেমন ভাড়া আদায় করে। আমরা ওদের কাছে জিম্মি। এ নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ হয় না বলে এখন আর কিছু বলি না।
এর আগে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাস মালিক সমিতির তিন দিনের অঘোষিত ধর্মঘটের পর বাসের ভাড়া বাড়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে করে ঢাকার বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ে ২৬ শতাংশেরও বেশি। তারপরও সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করছিল পরিবহন কোম্পানিগুলো।
এর মধ্যে বাসের ভাড়া কত নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে শুরু করে বিআরটিএ। অন্যদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ ঘোষণা দেন, রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে সিটিং-গেটলক সার্ভিস এবং ওয়েবিলের মাধ্যমে ভাড়া আদায় বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশনা না মানলে বাসের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিলসহ বাস মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তবে রোববার রজনীগন্ধ্যা বাসে সে হুঁশিয়ারিকে আমলে নিতে দেখা গেল না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ’র মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর