Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিসেম্বরে স্বাভাবিক নিয়মে ফিরছে আদালত

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২১ ১০:১৯

ঢাকা: প্রায় ২০ মাস বন্ধ থাকার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ফিজিক্যালি (শারীরিক উপস্থিতি) বিচারিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো বেঞ্চ ফিজিক্যালি চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

প্রধান বিচারপতির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীরা। তবে একইসঙ্গে কিছু সংখ্যক বেঞ্চ ভার্চুয়ালি চালু রাখারও দাবি জানিয়েছেন অনেক আইনজীবী। তাদের দাবি, অন্তত একটি করে রিট, দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি সংক্রান্ত বেঞ্চ যেন ভার্চুয়ালি চালু রাখা হয়।

গত বছর করোনা মহামারির পর আপিল বিভাগের কার্যক্রম ভার্চুয়ালি চলে আসছিল। তবে হাইকোর্ট বিভাগ শুরুতে ভার্চুয়ালি ছিল। এখন উভয় পদ্ধতিতে (ফিজিক্যাল/ভার্চুয়াল) চলছে।

গত ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের এক মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যালি (শারীরিক উপস্থিতিতে) সব কোর্ট খুলে দেবো। তবে ভার্চুয়াল কোর্টে কাজ হয় ডাবল (দ্বিগুণ)। ধরুন হঠাৎ এখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজন হলো। তখন তিনি এনেক্স বিল্ডিংয়ে, তার আসতে আসতে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট। আর ভার্চুয়ালি হলে অ্যাটর্নি জেনারেল একই চেয়ারে বসে থাকেন, জাস্ট টিপ দিয়ে দেন।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই ফিজিক্যাল কোর্টের ভক্ত। ডিসেম্বর থেকে আমি সব ফিজিক্যাল কোর্ট খুলে দেবো।’

গত বছর করোনা সংক্রমণের কারণে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ হওয়ার পর থেকে উচ্চ আদালতের সবগুলো বেঞ্চ ফিজিক্যালি চালুর দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শত শত আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদীর নেতৃত্বে সাধারণ আইনজীবীরা এসব কর্সসূচি পালন করেছেন।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো বেঞ্চ ফিজিক্যালি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ফিজিক্যাল কোর্ট চেয়ে আসছিলাম। গত সপ্তাহেও আমাদের কর্মসূচি ছিল। ডিসেম্বরে সব কোর্ট খুলে দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়ে আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্টের কারণে আমাদের হাজারও আইনজীবী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ বহু আইনজীবীর প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকায়, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে এবং সঠিকভাবে মোবাইল/কম্পিউটার/ল্যাপটপ ডিভাইস ব্যবহার করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

করোনা সংক্রমণের কারণে আদালতের ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই যে কয়জন আইনজীবী ভার্চুয়াল কোর্টের দাবি জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আইনজীবী ইসরাত হাসান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে ফিজিক্যালি সব কোর্ট চালু হলেও আমি মনে করি অন্তত একটি করে ভার্চুয়ালি কোর্ট চালু রাখা হোক। তবে আইনজীবীদের জন্য ফিজিক্যাল কোর্ট বেশি সুবিধাজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলি, গত কয়েকমাস আগে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী থানা পুলিশের হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পালিয়ে থাকা অবস্থায় হাইকোর্টের ভার্চুয়াল কোর্টে সংযুক্ত হয়ে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চান। তখন হাইকোর্ট তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশের আইজিপির প্রতি নির্দেশনা দেন। পক্ষান্তরে ঢাকার বাইরে থেকে অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের ফিজিক্যাল কোর্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভার্চুয়াল কোর্ট হওয়ার কারণে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার বিচারপ্রার্থী মানুষ সহজেই হাইকোর্টের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন। ভার্চুয়াল কোর্ট যেহেতু আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। তাই দেশের দূর-দূরান্তের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তত একটি করে রিট, দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি বেঞ্চ ভার্চুয়ালি চালু রাখা প্রয়োজন।’

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ.এফ.এম মেসবাহউদ্দিন কাছে ফিজিক্যাল কোর্টের সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফিজিক্যালি কোর্ট চললে আমাদের সুবিধা বেশি। ফিজিক্যাল কোর্টে সরাসরি কথা বলা যায়, দেখা যায়, মামলার তথ্য-উপাত্ত সহজেই আদালতে সাবমিট করা যায়। তাই এটি আমাদের জন্য ভালো হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে আমরা ফিজিক্যাল কোর্টে অভ্যস্ত হওয়ায় ভার্চুয়াল কোর্টে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি না। আমি মনে করি ফিজিক্যাল কোর্টে মামলা পরিচালনা করাটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।’

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ফিজিক্যাল কোর্ট (শারীরিক উপস্থিতিতে আদালত) চালুর পক্ষে। তবে করোনার সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় কিছু সিনিয়র ও বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী-বিচারকদের এখনো শারীরিক উপস্থিতিতে মামলার শুনানিতে অংশ নেওয়া কষ্টকর। তাই তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দিনের কিছুটা সময় কয়েকটি বেঞ্চে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু রাখা যেতে পারে।’

২০২০ সালের ৯ জুলাই ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০’ এর গেজেট জারির মাধ্যমে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত হয়। এই আইন মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, বা সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, বা আদেশ, বা রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা প্রদানের নিমিত্ত বিধান প্রণয়ন কল্পে প্রণীত আইন।

এর আগে ২০২০ সালের ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০ জারি করে সরকার। যা পরবর্তীতে ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন হিসেবে পাশ হয় এবং ৯ জুলাই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এরপর ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়।

এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সরকারি ছুটির ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগসহ দেশের সব আদালতে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ২৩ মার্চ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তারপর থেকে চলতি ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে বর্তমানে আপিল বিভাগ ভার্চুয়ালি পরিচালিত হলেও ফিজিক্যালি কোর্ট না থাকার কারণে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা অনিস্পন্ন (পেন্ডিং) থেকে যাচ্ছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম

আপিল বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর