Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ববাজারে কমছে তেলের দাম, পর্যবেক্ষণে জ্বালানি বিভাগ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৫৭

ঢাকা: দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে যখন হৈ চৈ চলছে তার মধ্যেই আন্তজার্তিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি চার ডলারের মতো কমেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ৮৫ ডলারের বিক্রি হলেও এখন তা কমে ৮০ দশমিক ৬৯ ডলারে নেমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে তেলের দাম এখনই কমছে না বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ জন্য অন্তত ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বলতে গেলে ২০১৫ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল ছিল। হঠাৎ করেই ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে তেলের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির চিত্র এমন যে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ ডলার। মার্চে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৬০ ডলার ও এপ্রিলে ৬৫ ডলার বাড়লেও মে মাসে অবশ্য এক ডলার কমে ৬৪ ডলার বিক্রি হয়। কিন্তু জুলাইয়ে এক লাফে ৭৩ ডলারে পৌঁছায়। আগস্টে ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলার এবং অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২৭ অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৭ ডলার। অবশ্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ৮২ দশমিক ৫ ডলার নেমে আসে। সর্বশেষ ১৪ নভেম্বর প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল বিক্রি হয় ৮০ দশমিক ৬৯ ডলার।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। রয়টার্স যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। সে কারণেই জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।

এদিকে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে গত ৪ নভেম্বর থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়ে গণপরিবহনে। এক পর্যায়ে গণপরিবহনগুলো ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অঘোষিত ধর্মঘটে চলে যায়। পরে সরকার ও পরিবহন মালিক সমিতির মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ আর লঞ্চ ভাড়া ৩৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কাভার্ডভ্যানে পণ্য পরিবহনেও ভাড়া বাড়ে।

ওই সময় পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার তেলের দাম কমালে তারা ভাড়াও কমাবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৫ ডলারের মতো কমেছে। আমরা বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণ করছি। তিন/চার দিনের বৃদ্ধি কিংবা কমার ওপরে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সামনে শীতকাল আসছে। ওই সময় জ্বালানির প্রয়োজনও বেশি। এদিকে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামও বাড়তে পারে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা অন্তত ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করে একটা সিদ্ধান্ত নেব। তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রেও আমরা ছয় মাস বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তেলের দাম কমলে গণপরিবহনের ভাড়াও কমবে— সড়ক পরিবহন নেতারা এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বাজারে তেলের দাম কমালে বাস ভাড়াও কমানো হবে। তবে গত সাত বছরে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এমনকি এবার যে হারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে সে অনুযায়ী বাস ভাড়া বাড়েনি।’

উল্লেখ্য, তেলের দাম বাড়িয়ে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলেছিল, আন্তজার্তিক বাজারে তেলের দাম কমলে দেশের বাজারেও কমানো হবে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

জ্বালানি তেল বিশ্ববাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর