Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পদের মর্যাদা দিয়ে বিল পাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৯

ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতাকে মন্ত্রী এবং উপনেতাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। এর ফলে সংসদীয় এই দুইটি পদ আইনি ভিত্তি পেল। এতদিন সামরিক শাসনামলে জারি করা বিশেষ অধ্যাদেশের আওতায় বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতাকে বিশেষ অধিকারসহ বেতন-ভাতা দেওয়া হতো।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সংসদ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ‘বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১ সংসদে’ প্রস্তাব করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিজ্ঞাপন

বিলটি পাসের আগে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ, হুইপদের মর্যাদা দাবি করেন। একইসঙ্গে বিরোধী দল থেকে সংসদের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের দাবিও জানান।

বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত এই বিলে বলা হয়েছে, বিরোধী দলীয় নেতা সরকারের একজন মন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বিশেষাধিকার পাবেন। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় উপনেতা একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বিশেষাধিকার পাবেন।

আরও পড়ুন- আইনি ভিত্তি পাচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পদ

গত ৩ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পরে ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়ে।

এই বিল পাস হওয়ার আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি  করা হয়। সংসদে উত্থাপিত বিলের শিরোনামে বিরোধী দলীয় নেতা বলা হয়েছিল, তা সংশোধন হয়ে বিরোধী দলের নেতা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের সংবিধানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। এ সংক্রান্ত কোনো আইনও প্রণয়ন করা হয়নি। পরে ১৯৭৯ সালে ‘বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ’ জারি করে তাদের পারিতোষিক ও মর্যাদা দেওয়া হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিরোধী দলীয় নেতা মন্ত্রী ও উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে থাকেন। বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার স্বীকৃতি দেওয়ার একক ক্ষমতা সংসদের স্পিকারের।

বিরোধী দলীয় নেতা মনোনয়নের বিষয়ে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২(১)(ট) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনা অনুযায়ী সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে যে দল গঠিত, তার নেতা। তবে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধিতে বিরোধী দলীয় উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই।

প্রচলিত নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন শেষে সংসদ গঠনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দলটির সংসদীয় কমিটি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনীত করে থাকে। সেটি সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংসদের স্পিকারকে জানাতে হয়। পরবর্তী সময়ে স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।

সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনয়নে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো বৈঠক ছাড়াই ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ঘোষণা দেন, দলে পদাধিকার বলে তিনিই হবেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। ওই সময় তিনি তার ভাই জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে মনোনীত করেন। পরদিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন এরশাদ।

এরপর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা ও জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার। একই বছরের ২২ মার্চ স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে জি এম কাদেরের পরিবর্তে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা করার অনুরোধ জানান এরশাদ। পরদিন ২৩ মার্চ রওশনকে বিরোধী দলীয় উপনেতার স্বীকৃতি দেন স্পিকার।

এ সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতেই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত সামরিক আমলের সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। আইনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সংসদীয় কমিটিও এর ওপর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। সবশেষ আজ সংসদে এ সংক্রান্ত বিলটি পাস হওয়ার মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পদ দুইটি আইনি ভিত্তি পেল।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার বিরোধী দলীয় উপনেতা বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে বিল পাস

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর