আমদানিকারক ‘সিন্ডিকেটেও’ বেড়েছে সারের দাম!
১৬ নভেম্বর ২০২১ ২২:৪৫
ঢাকা: দেশে সারের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমদানিকারকদের ‘সিন্ডিকেট’কে দায়ী করা হচ্ছে। চলতি বছর নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে যে কয়েকটি কোম্পানি সরকারের ভর্তুকি পাচ্ছে, সেই তালিকায় একই ব্যক্তির নামে রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একজনের নামে রয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান, তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক রয়েছেন এক জন। আর তিন জনের নামে রয়েছে দুইটি করে প্রতিষ্ঠান।
এ বছর নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় সরকার। ভর্তুকি পাওয়া এই ৩২টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানেরই মালিক শেখ জাসিম উদ্দিন। তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাদিকুর রহমান। দু’টি করে কোম্পানি রয়েছে নাজনীন হোসাইন, আমিনুর রশিদ খান ও ফয়জুর রহমানের নামে। তালিকায় এসব ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও একই দেখা গেছে।
ডিলাররা বলছেন, আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কারণে পদে পদে তাদের ভুগতে হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তিই নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে থাকে বলে জানিয়েছেন সার কোম্পানিতে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এদিকে, ডিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি রাখছেন— এমন অভিযোগ থাকলেও তারা তা অস্বীকার করেছেন। বরং তারা বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাব-ডিলাররা সারের দাম বেশি রাখছে। তবে সরকার সারের বাজারে কোন সিন্ডিকেট দেখছে না। মজুত পরিস্থিতি ঠিক থাকায় বাজারে বাড়তি দামে সার বিক্রি হচ্ছে না বলেও সরকারের দাবি।
একটি সার কোম্পানিতে কর্মরত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই সময়ে নন-ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকে। যারা সার আমদানি করে, তারা গুদামজাত করে সারের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ১০ থেকে ২০ জনের মতো আমদানিকারক রয়েছেন। মূলত তারাই সারের দাম বাড়িয়েছেন। কোনো ছোট ডিলার যদি দাম বাড়াত, তাহলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সারের দাম বাড়ত। কিন্তু সারাদেশেই যেহেতু সারের দাম বেড়েছে, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ছাড়া অন্য কারও হাত নেই। বর্তমানে নন-ইউরিয়া সারের দাম বেশি। ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার এমওপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা বস্তায়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিভাগের একজন ডিলার সারাবাংলাকে বলেন, ‘টাকা দেওয়ার পরও আমদানিকারকরা ডিলারদের দুই থেকে তিন দিন সময় নষ্ট করে। উপজেলাগুলোতে ডিলারদের সমান বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই কাগজ নিয়ে গুদামে গেলে আমদানিকারকরা নানাভাবে হয়রানি করে। টাকা পায়নি— এমন অজুহাত দেখায়। হেড অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ার অজুহাতও দেখায়। অনেক সময় ডিলারদের মোকামে যেতে বাধ্য করা হয়। তাদের দেখার কথা, তারা কাগজ পেয়েছে কি না। কিন্তু তারা কাগজ পেলেও সার ডেলিভারি দেয় না।’
আরও পড়ুন- সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না সার
তিনি আরও বলেন, ‘ধরেন একদিনে ১০ থেকে ২০টি কাগজ (ডিও লেটার) গেল। তারা সেদিন সার না দিয়ে একসঙ্গে ৫০টি কাগজের সার দেয়। এতে মোকাম এলাকায় ট্রাকের সংকট দেখা দেয়। শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। এ কারণে আমাদের ভুগতে হয়।’
ওই ডিলার বলেন, ‘একজন আমদানিকারক (একক ব্যক্তি বা মালিক) ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে তার পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তো দরপত্রে উত্তীর্ণ হয়। এর ফলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির হাত ধরেই সার আমদানি হয়। আমদানিকারকদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট আছে, তাদের পাল্লায় পড়ে আমাদের ভুগতে হয়।’
নীলফামারীর একজন ডিলার ওয়াহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি অফিসের দেওয়া বরাদ্দপত্র নিয়ে আমদানিকারদের কাছে আমাদের যেতে হয়। এর আগে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হয়। এখন পে-অর্ডার নিয়ে গেলে দ্রুত সার ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে এই ডিলার বলেন, ‘আমদানিকারদের কাছ থেকে সার পেতে কোনো সমস্যা হলে আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিকে (ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন) জানালে তারা ব্যবস্থা করে দেয়। তখন সার পেতে সমস্যা হয় না।’
খুলনার ডিলার নাছির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা টাকা জমা দিলেও বরাদ্দপত্রসহ বিভিন্ন কাগজ তারা ভেরিফাই করে। সাধারণত তারা নির্দিষ্ট সময়ে সার ডেলিভারি দিয়ে দেয়। কিন্তু ক্রাইসিস থাকলে ভেরিফাইয়ের নাম করে দুই-তিন দিন দেরি করে। আবার অনেক সময় আমি ডিএসপি সার আনতে গেছি, কিন্তু তারা আমাদের এমওপি সারও আনতে বাধ্য করে। অর্থাৎ এক সারের সঙ্গে আরেকটি ট্যাগ করে দেয়।’ এক প্রশ্নের উত্তরে এই ডিলার বলেন, ‘একই মালিকের দুই-তিনটি কোম্পানি থাকতে পারে। আমদানিকারদের মাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক সিস্টার্ন কনসার্নও থাকতে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একজন ডিলার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই সারের দাম বেশি নিতে পারি না। আমাদের এখানে লালসালুতে সারের দাম উল্লেখ করা আছে। সাব-ডিলাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে সার সংগ্রহ করেন। তাই তারা একটু দাম বেশি নেয়।’
আরও পড়ুন- বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সার, উপেক্ষিত সরকারি নির্দেশনা
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ইউরিয়া বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। এবার আমদানি হয়নি। তাই অনেকেই হয়তো মজুত করে রেখেছিলেন। এজন্য বাজারে সারের দাম বেড়েছিল।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকদের মধ্যে সিন্ডিকেট থাকতে পারে। আমরা ছোট মানুষ, সেটা ধারণা করতে পারি না। তবে বেশিরভাগ সময় একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকেই সার এনে থাকি। যদিও কোন ডিলার কোন আমদানিকারকের কাছ থেকে সার আনবে, তা ডিও লেটারে উল্লেখ থাকে।’ নির্দিষ্ট সময়ে আমদানিকারকরা অনেক সময় সার সরবরাহ করে না এমন তথ্য এই ডিলারও জানিয়েছেন।
নন-ইউরিয়া আমদানিতে ৩২ কোম্পানি, একই মালিকের নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) তালিকাভুক্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠান নন-ইউরিয়া সার আমদানি করবে। এসব প্রতিষ্ঠান সার আমদানিতে সরকারের ভর্তুকি পেয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— নোয়াপাড়া ট্রেডিং, সুফলা ট্রেডিং করপোরেশন, দিপা এন্টারপ্রাইজ, সফিউল্লাহ গালফ, নোয়াপাড়া ট্রেডার্স, তায়িবা শফিউল্লাহ (জি এল), ফয়েজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আলিফ ট্রেডিং, নওয়াজ ট্রেডার্স, কামরু এন্টারপ্রাইজ, ফয়েজ ট্রেডিং করপোরেশন, ডেইলি ট্রেডিং কোম্পানি লি., বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড, এশিয়া ওয়ান ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, ডিরেক্ট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, ইউরেশিয়া ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, আকন এন্টারপ্রাইজ, এরাইজিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সান সাইনিং লিমিটেড, আফরোজ ট্রেড এজেন্সি, আশফাক এন্টারপ্রাইজ, রত্না এন্টারপ্রাইজ, আজমাইন ট্রেডার্স, দিশা ইন্টারন্যাশনাল, মোশারফ অ্যান্ড ব্রাদার্স, এন এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ও এম এন্টারপ্রাইজ, নাজনীন এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম ব্রাদার অ্যান্ড কোং, দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, উত্তরা ট্রেডার্স (প্রা.) লিমিটেড ও বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েন থেকে পাওয়া ওই তালিকায় দেখা গেছে, নোয়াপাড়া ট্রেডার্স, সাইফুল্লাহ গালফ ও তায়িবা সাইফুল্লাহ নামের প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিক সাদিকুর রহমান একাই। অন্যদিকে ডেইলি ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড, এশিয়া ওয়ান ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, ডিরেক্ট কোম্পানি লিমিটেড ও ইউরেশিয়া ট্রেডিং কোম্পানি— এই পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক শেখ জসিম উদ্দিন।
এদিকে, সার আমাদনিকারক প্রতিষ্ঠান এন এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও নাজনীন এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজনীন হোসাইন। দেশ ট্রেডিং করপোরেশন ও বাল্ক টেড ইন্টারন্যাশনাল নামের সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিক প্রফেসর আমিনুর রশিদ খান। আর নোয়াপাড়া ট্রেডার্স ও ফয়েজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফয়জুর রহমান।
একাই পাঁচ কোম্পানির মালিক শেখ জসিম উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে (০১৯১২১৮৯…) কল করা হলে আব্দুল কাইয়ুম নামের একজন ফোন ধরেন। নিজেকে আকিজ গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (এইচআর) পরিচয় দিয়ে কাইয়ুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সারের বাড়তি কোনো রেট নিচ্ছি না। ডিলাররা এলে যথাসময়েই সার দেওয়া হচ্ছে। আমরা এবারই প্রথম সার আমদানি করছি। প্রতিষ্ঠান পাঁচটির মালিকের নাম একই উল্লেখ করা হলেও এই ব্যবসাটি পাঁচ ভাইয়ের।’
তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাদিকুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আবার দুইটি করে কোম্পানির মালিক যে তিন জন, তাদের মোবাইল নম্বরে কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান পোটন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একই মালিক ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির নামে দরপত্রে অংশ নিতে পারেন। ভর্তুকি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মালিক এক হতে পারে। এখানে আমাদের হাত নেই। আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। দরপত্রের পুরো বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় দেখে থাকে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদানিকারকদের মধ্যে সিন্ডিকেট আছে— বাইরে থেকে আমরাও এটি শুনি। কিন্তু সরকারি কোনো প্রতিবেদন বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে এমন কোনো প্রতিবেদন নেই। দরপত্রে অংশ নিতে গেছে, ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে— এমন কোনো অভিযোগও নেই। দরপত্রে অংশ নিতে আমাদের মেম্বারশিপ লাগে। আমরা আমাদের সব সদস্যকে দরপত্রে অংশ নিতে উৎসাহিত করি।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে বিএফএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে সিন্ডকেট করার কোনো সুযোগ নেই। অনেকের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় হয়তো চার থেকে পাঁচটি কোম্পানিই বেশি সার আমদানি করে থাকে। আমরা চাই এখানে নতুন সদস্যরা আসুক। নতুন সদস্যরা এলে ডিলাররা আরও বেশি সুবিধা পাবে।’
আমদানিকারকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে সার পাওয়া না গেলে আপনাদের শরণাপন্ন হলে দ্রুত বরাদ্দের সার পাওয়া যায়— ডিলারদের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কামরুল আশরাফ বলেন, সারাদেশে আমাদের ডিলাররা রয়েছেন। তাদের কোনো সমস্যা হলে আমরা হস্তক্ষেপ করি। ডিলারদের কোনো সমস্যা হলে আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইং) মাহবুবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার নিয়ে সমস্যা নেই। জেলা পর্যায়ে কোনো সমস্যা নেই। আপনারা বলছেন সমস্যা, আমাদের তথ্য বলছে কোনো সমস্যা নেই। সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ীই সবাই বরাদ্দ পাচ্ছে।’
একই মালিকের নামে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি জানতে চাইলে মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘একাধিক প্রতিষ্ঠান একই মালিকের হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিটি কোম্পানি ভিন্ন নামের।’ বিএফএ থেকে দেওয়া তালিকাতেই একই ব্যক্তির নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
সার নিয়ে কোনো ধরনের সংকটের তথ্য স্বীকার করছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও। সংস্থাটির মহাপরিচালক আসাদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারের মজুতের ঘাটতি নেই। দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। রবি মৌসুম ও আগামী বোরো মৌসুমে সারের কোনো সংকট হবে না। চাহিদা অনুযায়ীই সার পাওয়া যাবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে— কোনো এলাকা থেকে এমন খবর এলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা নানাভাবে বাজার মনিটরিং করছি।’
প্রসঙ্গত, দেশে সারের চারটি মোকাম রয়েছে। মোকামগুলো হলো— নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম (মাঝিঘাট), যশোর (নেয়াপাড়া) ও পাবনা (নগরবাড়ি ঘাট)। এই চারটি মোকাম থেকেই সারাদেশে সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি হলে ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল হবে। একেকটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার থাকেন। একজন ডিলারে অধীনে ৯ জন সাব-ডিলার থাকেন। মূলত ১০ জন মিলেই এক ইউনিয়নের সারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। এর বাইরে বিএডিসি’র ডিলারাও রয়েছেন। এই সংখ্যা ৫ থেকে ১০ জন হয়ে থাকে। ডিলার বা সাব-ডিলার নয়— তারাও সার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সব মিলিয়ে একটি ইউনিয়নের সারের বাজার ১৫ থেকে ২০ জনের হাতে।
ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন আরও বলছে, ডিলাররা টাকা পাঠালেও অনেক সময় আমদানিকারকরা নির্ধারিত সময়ে সার পাঠাতে পারেন না। আর ডিলাররা সার না পাওয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সারের সংকট দেখা দেয়। এ কারণেই সারের বাজার সাময়িক সময়ের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বর মাস সারের মিনি পিক-টাইম। নভেম্বর লিন-টাইম। মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত সারের পিক-টাইম। এই সময়ে সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। সরকার এজন্য সারের মজুত বেশি করে থাকে। মিনি পিক-টাইম চলে গেছে, এখন লিন-টাইম। এসময় সারের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের কাছেও সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
জানা গেছে, দেশে ইউরিয়া সার সরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়ে থাকে। আর নন-ইউরিয়া সার সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে ৬০ শতাংশ ও বেসরকারি পর্যায়ে ৪০ শতাংশ সার আমদানি হয়ে থাকে। দেশে প্রতিবছর ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ১০ লাখ টনের মতো। বাকিটা সরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়ে থাকে। টিএসপি সারের চাহিদা ৭ লাখ ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে বিসিআইসি উৎপাদন করে ১ লাখ টন। বাকি ৬০ শতাংশ আমদানি করে বিএডিসি ও ৪০ শতাংশ আমদানি হয় বেসরকারি পর্যায়ে।
এদিকে, এমওপির চাহিদা ৭ লাখ ৫০ হাজার টন। এর পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এর ৬০ শতাংশ আমাদানি হয় সরকারি পর্যায়ে, ৪০ শতাংশ বেসরকারি পর্যায়ে। ডিএপি সারের চাহিদা ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ১ লাখ টন। এই সারের ৬০ শতাংশ সরকার ও ৪০ শতাংশ বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়ে থাকে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েন বিএফএ