Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি পিবিআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২১ ১৭:০২

কার্টুনিস্ট কিশোর, ফাইল ছবি

ঢাকা: কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অফিস সহকারী রাশেদুল আলম বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। আগামী ২৪ নভেম্বর ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে আনা কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এর আগে গত ১০ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন কার্টুনিস্ট কিশোর। মামলার আবেদনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ১৬-১৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে কিশোরকে হাতকড়াসহ মুখে মুখোশ পরিয়ে অজানা নির্জন একটি জায়গায় নিয়ে যায়।

মামলার এজাহারে কিশোর উল্লেখ করেন, বিকেলে বাসার কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজন বলল, দরজা খোলেন না কেন? লুঙ্গি পরিবর্তন করে প্যান্ট পড়ে নেন, সঙ্গে একটা ভালো শার্ট। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে কিছুই বলেনি। ঘরে ঢুকেই তারা তল্লাশি শুরু করে। আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। আমার বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ, পোর্টেবল হার্ডডিস্কসহ যত ডিজিটাল ডিভাইস ছিল সবই তারা অবৈধভাবে নিয়ে যায়। আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনা হয় তখন বাসার সামনে ৬-৭ টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। এরপর আমাকে একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। আমার বাসার সামনে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল । আমি তখন প্রচণ্ড জোরে জোরে চিৎকার করি। কিন্তু গাড়িতে অনেক বড় শব্দ করে গান বাজানো হচ্ছিল। তাই হয়ত আমার চিৎকারের শব্দ বাইরে শোনা যায়নি। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে একটি পুরানো এবং স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির ভিতরে আনা হয়েছে। গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর প্রজেক্টরে একের পর এক কার্টুন দেখিয়ে সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন এঁকেছি এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করা হয়। একপর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পড় মারে। কিছুক্ষণের জন্য আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা এবং ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম।

এতে বলা হয়, এভাবে কয়েক দফা আমার ওপর শারীরিক এবং মানসিক টর্চার অত্যাচার চালায়। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‍্যাবের কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‍্যাবের কার্যালয়ে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে দেখা হয়। মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় সে আমাকে জানায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। এরপর গত ৬ মে আমাদের রমনা থানায় পাঠানো হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে গেলে হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

গত ১০ মার্চ নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন কিশোর কুমার। এরপর আদালতের নির্দেশে গত ১৬ মার্চ কিশোরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

এই মেডিকেল বোর্ড কিশোরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গত ২০ মার্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদনটি জমা দেন।

সারাবাংলা/এআই/আইই

কার্টুনিস্ট কিশোর টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর