Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু ফাহিমার হত্যাকারী বাবা, নেপথ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৫৭ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ২৩:২৮

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার আমির হোসেন ও তার সহযোগীরা, ইনসেটে হত্যার শিকার শিশু ফাহিমা

ঢাকা: বিবাহিত জীবনে পাঁচ বছর বয়সী এক সন্তানের জনক আমির হোসেন (২৫)। কিন্তু প্রতিবেশী এক নারী লাইলি আক্তারের (৩০) সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এক দিন ওই নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর অবস্থা’য় আমির হোসেনকে দেখে ফেলেন তার মেয়ে ফাহিমা। মা’কে এ কথা বলে দেবে— মেয়ে এমন কথা বললে আমির হোসেন চটে ওঠে। পরে ওই নারীর সঙ্গে ‘পরামর্শ’ করে সিদ্ধান্ত নেয়, মেয়ে যেন কোনোভাবেই তার স্ত্রীকে এ কথা না বলতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এরই জের ধরে শেষ পর্যন্ত বাবার পরিকল্পনায় জীবন দিতে হয় শিশু ফাহিমাকে।

বিজ্ঞাপন

লাইলিসহ ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম ইমন (২২) এবং রবিউল আওয়াল ও সোহেল রানা নামে আরও দু’জনের সহযোগিতায় শিশু ফাহিমাকে ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহটি বস্তাবন্দি করে নিয়ে ফেলে রাখা হয় কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি এলাকার এক ডোবায়!

যে বস্তায় ভরে শিশু ফাহিমার মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল, সেই বস্তাকে সূত্র ধরেই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) শিশু ফাহিমাকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। শেষ পর্যন্ত র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ফাহিমার বাবা আমির হোসেনসহ তার চার সহযোগী।

বুধবার (১৭ নভেম্বর)  দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই হত্যা রহস্য উদঘাটনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ব্রিফ করছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিবেশী লাইলি আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লার দেবিদ্বারের ট্রাক্টরচালক আমির হোসেন। প্রায় বছর খানেক ধরে তাদের এই সম্পর্ক চলে আসছিল। এক পর্যায়ে আমির হোসেনের মেয়ে তাদের ‘আপত্তিকর অবস্থা’য় দেখে ফেললে বিপত্তি বাঁধে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাইলির প্ররোচনায় নিজের মেয়ে ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বাবা আমির হোসেন।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, আমির ও লাইলি পরিকল্পনা করেন— ফাহিমাকে মেরে ফেললে পথ পরিষ্কার। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক কেউ জানবে না। এরপর স্ত্রীকে খুন করে বা ডিভোর্স দিয়ে লাইলিকে নিয়ে নতুন করে সংসার পাতবেন আমির। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই ছোট ভাই রেজাউলসহ আরও দু’জনকে টাকার বিনিময়ে সহযোগী হিসেবে ঠিক করেন আমির। সেটি ৬ নভেম্বরের কথা। ওই দিনই ফাহিমাকে হত্যা করতে ধারালো ছুরি কেনা হয়, হত্যার পর তার মরদেহ গুম করতে দু’টি প্লাস্টিকের বস্তাও সংগ্রহ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব বলছে, গত ৭ নভেম্বর বিকেলে ফাহিমাকে চকলেট কিনে দেওয়া ও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন চাচা রেজাউল। চাঁপানগর রাস্তার মোড় থেকে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাত করেন তিনি। পরে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন বাবা আমির হোসেন নিজেই। এরপর আমির নিজেই মেয়ে নিখোঁজ জানিয়ে গ্রামে মাইকিং করেন। ৭ ও ৮ নভেম্বর শ্বশুর-শাশুড়িসহ আত্মীয়দের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফাহিমার জন্য সন্ধান চালান। পরে থানায় জিডি ও মামলাও দায়ের করেন। এমনকি গত ৮ নভেম্বর মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেন।

র‌্যাব জানাচ্ছে, প্রকৃত ঘটনা হলো— হত্যার পর ফাহিমার মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর গোয়ালে ড্রামে লুকিয়ে রাখা হয়। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির হোসেন, রবিউল ও রেজাউল বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ কাচিসাইরে কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেন। গত ১৪ নভেম্বর বস্তাবন্দি সেই মরদেহ উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব কমান্ডার জানান, বস্তাবন্দি শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর আমির হোসেন তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এরপর আমির হোসেন নিজেই বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেন। পরে র‌্যাব মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। আর তাতেই বেরিয়ে আসে— আমির হোসেন নিজেই সন্তানের ঘাতক!

হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হলো কীভাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় মরদেহ ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেটিই প্রথম আমলে নেন র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। বস্তার খোঁজে আশপাশের দুইটি গরুর খামারে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে একইরকম বস্তা দেখতে পান তারা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ অন্য আসামিদের।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। গ্রেফতারের পর আমরা আমির হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি পরকীয়া সম্পর্কে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে নিজ সন্তানকে হত্যা নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার শিশু ফাহিমা হত্যাকারী বাবা