যানচলাচল ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে নড়েচড়ে বসেছে ঢাবি প্রশাসন
১৭ নভেম্বর ২০২১ ২৩:১১
রাজধানী শহরের মূল পয়েন্টে অবস্থান করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনজট ও যানজট নিত্যদিনের চিত্র। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসবের কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনয় ভুগছেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ভাসমান দোকান উচ্ছেদ, অপ্রয়োজনে যত্রতত্র পার্ক করা গাড়ির মালিকদের জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজন না থাকলে যেন বাইরের কেউ ঢাবি ক্যাম্পাসে না যান, সে নির্দেশনাও এসেছে ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনাতেই তারা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ধরনের উদ্যোগ আগেও ছিল। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকায় এ উদ্যোগগুলো নজরে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যখন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল, তখন নিয়ম-কানুন মেনে বিভিন্ন প্রবেশপথে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে বলে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন কিছু করছি না। বরং পুরোনো বিষয়গুলোকে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার জন্য সাত থেকে আটটি পথ আছে। এই প্রবেশপথগুলো মূলত শাহবাগ-নীলক্ষেত-বঙ্গবাজারসহ কয়েকটি সড়কের বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার করেন গাড়িচালকরা। এর ফলে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যানজট ও শব্দ দূষণের ঘটনা নিত্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা তুলনামূলক সবুজে ঘেরা হওয়ায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা থাকে এখানে। এ সময়টিতে ক্যাম্পাসের টিএসসি, ভিসি চত্বর, মিলন চত্বর, ফুলার সংলগ্ন এলাকায় জনযট দেখা দেয়।
টিএসসি লাগোয়া রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস রাকা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে হলের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। প্রচুর শব্দ দূষণ হয়। বাইরে তো বের হওয়াই যায় না। হলের সামনেই মহাসড়কের মতো যানজট থাকে।‘
এছাড়া রাত গড়ালেই মালামালবাহী বড় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক হয়ে যাতায়াত করে থাকে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের ভেতরেই ট্রাকের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিষয় নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
ডিএমপিকে প্রক্টরের চিঠি
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহযোগিতা চেয়ে গত ২২ অক্টোবর চিঠি দেন ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী। চিঠির জবাব আসে গত ১১ নভেম্বর। প্রক্টর অফিস থেকে প্রাওয়া তথ্য বলছে, চিঠিতে ডিএমপি জানিয়েছে যে ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিএমপির পক্ষ থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ভারী যানবাহনগুলো চলাচল না করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে অঘোষিতভাবে গড়ে ওঠা রিকশা স্ট্যান্ডগুলো রাস্তার একটি অংশ দখল করে রাখার কারণেও যানজট তৈরি হয়। প্রক্টর জানান, এগুলো উচ্ছেদে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আসলে সেগুলো রিকশা স্ট্যান্ড নয়। বরং সেখানে জট লাগিয়ে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।’
ভাসমান জনগোষ্ঠী উচ্ছেদে তৎপরতা
গত ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনার আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ থেকে তার মরদেহ শনাক্ত করা যায়। এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে ডিবি জানায়, ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় হাফিজের তিন বন্ধু তাকে এলএসডি নামক এক ধরনের উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল মাদক সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শর্টস পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢামেক হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন।
হাফিজুরের সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু রেকর্ড করে ঢামেক। এর আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।
মাদক সেবনের প্রতিক্রিয়ায় দা দিয়ে নিজের গলায় আঘাত করে হাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে আবারও আলোচনায় আসে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার বিষয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন যদি মে ধারালো অস্ত্রের সন্ধান না পেত, তাহলে সেদিন ওই ঘটনা না-ও ঘটতে পারত। এ ধরনের চিন্তাই হয়তো তার মাথায় আসত না। পুলিশকে আমরা জানিয়েছি, যেন এই ধরনের ডাবওয়ালা বা ধারালো অস্ত্র থাকে— এমন কোনো ভাসমান অবৈধ দোকান যেন আশপাশে না থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ঢাকা মেডিকেলগামী সড়ক, ফুলার রোড, পলাশী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাসমান মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। রাত গড়ালেই ফুটপাথজুড়ে এদের দেখা মেলে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ও সুফিয়া কামাল হলের সামনে ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এগুলো নিয়েই তো কাজ করছি। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর