বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ হবে শ্বসনতন্ত্রের রোগ
১৭ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৩০
ঢাকা: শ্বসনতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ হলো ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যেও সিওপিডি একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচিরেই বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সব কারণের মধ্যে এই রোগটির অবস্থান হবে তৃতীয়। তাই ভয়ংকর এই রোগ সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে এবং প্রতিরোধে সচেষ্ট হতে হবে।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময়ব্যাপী বিভিন্ন বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক উপাদান শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করার ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ তৈরি হয়। এছাড়াও আক্রান্ত ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ু কুঠুরিগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় (এমফাইসিমা) অথবা শ্বাসনালীর অংশগুলোর আবরণের ধরন পরিবর্তিত হয়ে বাড়তি মিউকাস নিঃসরণ করে এবং সিলিয়া বা প্রক্ষেপকযুক্ত আবরণীয় সংখ্যা কমে যায় (ব্রংকাইটিস)। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কফ নিঃসরণ ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠতে থাকে।
তিনি বলেন, ধূমপানই সিওপিডির প্রধানতম কারণ। যারা প্রতিদিন এক প্যাকেট সিগারেট ১০ বছর ধরে খেয়ে চলেছেন, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে তাদের প্রতি দু’জনের এক জন সিওপিডিতে ভুগবেন। তাই ধূমপান ত্যাগ করা সিওপিডি থেকে মুক্ত থাকার প্রধানতম উপায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পেট্রোলিয়াম জাতীয় ধোঁয়া, লাকড়ির চুলা নিঃসৃত ধোঁয়া এবং অন্যের সেবন করা সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসের একই ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে এবং একসময় এমন অবস্থায় এসে পৌঁছায় যে তখন রোগী নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতেও শ্বাসকষ্টে ভোগেন। একই সঙ্গে দানা বাঁধে সিওপিডি-জনিত অন্যান্য জটিলতা যেমন— হৃদরোগ, মাংসপেশীর দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, বিষণ্ণতা, ফুসফুসের ক্যানসার ইত্যাদি নানান ধরনের বাড়তি সমস্যা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সকালে বিএসএমএমইউ’র শ্বাসকষ্টসহ বক্ষব্যাধির বিভিন্ন রোগের জরুরি চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগ, পোস্ট কোভিড কেয়ার সেন্টার, স্লিপ ল্যাব, ব্রংকোস্কপি প্রসিডিউর রুম উদ্বোধন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক র্যালি বের হয়, বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এছাড়াও রাউন্ড টেবিল বৈঠক ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘সুস্থ ফুসফুস সর্বাধিক গুরুত্বের এখনই সময়’।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর