ভৈরবে প্যারাসিটামলের সংকট, চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ
১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৪৫
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): জেলার ভৈরব উপজেলায় গত একমাস ধরে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-কাশি ও জ্বরসহ শীতকালীন অন্যান্য বিভিন্ন রোগের ওষুধ সংকটে পড়েছে শহর ও গ্রামের বাসিন্দারা। এই সুযোগে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ছোট-বড় ফার্মেসিগুলোতে কিছু ওষুধ থাকলেও চড়া দামে বিক্রি করছেন মালিকরা।
পৌর শহরসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো ফার্মেসিতেই মিলছে না এজিথ্রোমাইসিন, সাফিজিম ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় কোনো ওষুধ। এমনকি পাইকারী ও খুচরা দোকানেও এসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ভৈরবে গত একমাস ধরে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীরা প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ জাতীয় ওষুধ সংকটে পড়েছে। ফার্মেসিতে গিয়ে এসব ওষুধ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। ভৈরবের বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা ফার্মেসিতে চড়া দামে বিক্রি করছে এসব ওষুধ। আর অনেকটা বাধ্য উচ্চ মূল্যে এসব ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। একটি প্যারাসিটামল খুচরা মূল্য ৮০ পয়সা হলেও দাম বাড়িয়ে ২ থেকে ৩ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কাশির সিরাপ নির্ধারিত মূল্য ২০ টাকা হলেও দাম বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।
ভৈরব পৌর শহরের বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফার্মেসি আছে প্রায় দুই শতাধিক। এসব ফার্মেসিতে ঘুরে কথা হয় শীতকালীন ঠান্ডা-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে। তাদের একজন চাকুরিজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, শিশু সন্তানের জন্য এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় সিরাপ কিনতে এসে অন্তত ৫টি ফার্মেসি ঘুরেও ওষুধ কিনতে পারেননি।
সাবিহা মাহবুব নামে অপর এক নারীর বক্তব্যও একই। তিনি জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দুইদিন এসেছেন ওষুধ কিনতে। প্রেসক্রিপশনের কিছু ওষুধ মিললেও অনেক ওষুধই পাওয়া যাচ্ছে না ফার্মেসিগুলোতে। এভাবে কাঙ্ক্ষিত ওষুধ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে মজুদকৃত প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
উপজেলার জাফরনগর এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান, একপাতা নাপা ট্যাবলেট শহর থেকে কিনেছিলাম ১০ টাকায়। কিন্তু নিজের এলাকার গ্রাম থেকে কিনতে হয়েছে ৩০ টাকায়। অথচ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি পিস নাপা ট্যাবলেটের দাম ৮০ পয়সা, ১০টি ট্যাবলেটের প্রতি পাতার মূল্য দাঁড়ায় মাত্র ৮ টাকা। এভাবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের শতাধিক ফার্মেসিতে সাধারণ মানুষদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে বর্তমানে নাপাসহ প্যারাসিটামল জাতীয় সবধরনের ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ এজিথ্রোমাইসিন, সাফিজিম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকটের কথা স্বীকার করেছে ব্যবসায়ী নেতারা।
স্থানীয় ফার্মেসির এক মালিকরা জানান, স্থানীয় ডির্পো থেকে অনেক দিন ধরে এই জাতীয় ওষুধের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে এবং বন্ধ রয়েছে। তাই এই সংকট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ভৈরব শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আক্রাম হোসেন এই সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জাতীয় ওষুধের সরবরাহ না থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছি। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা বলা মুশকিল।
সমিতির সভাপতি ও ভৈরব ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চন্দন কুমার পাল বলেন, প্যারাসিটামল, এজিয়োমাইসিন, সাফিজিম ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধের সংকট দীর্ঘ দিন ধরে। আমরা ক্রেতা ও রোগীদেরকে এই সব জাতীয় ওষুধ দিতে পারছি না। ওষুধ কোম্পানি ও সরকারের কাছে অনুরোধ অতিদ্রুত এসব ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা ঔষধ প্রশাসনের পরিদর্শক তাহমিদ জামিল বলেন, ওষুধের দাম বাড়িয়ে রাখা মারাত্মক অপরাধ। যদি এই রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে অব্যশই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস