সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে রাজধানীতে বাড়বে পাবলিক টয়লেট
১৮ নভেম্বর ২০২১ ২২:০৮
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি করে পাবলিক টয়লেট রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সংখ্যা বাড়ানো যায়। একইসঙ্গে ঢাকায় ইতোমধ্যে যেসব পাবলিক টয়লেট রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও উন্নয়ন করা যায়।
‘বিশ্ব টয়লেট দিবস-২০২১’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) ‘ভূমিজ’ এবং ‘ওয়াটার এইড’ এর যৌথ আয়োজনে এই গোলটেবিল আলোচনার বিষয় ছিল ‘ভ্যালুয়িং টয়লেট’ বা টয়লেটের মূল্যায়ন। ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশের টয়লেট ক্লিনিং ব্র্যান্ড ‘ডোমেক্স’, কিম্বারলি ক্লার্ক এবং সামাজিক উদ্যোগ ট্রান্সফর্ম।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘এসডিজি ৬.২’ অর্থাৎ সবার জন্য পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চত করার ক্ষেত্রে বর্তমান স্যানিটেশন কার্যক্রমের প্রক্রিয়া এবং শহরে এটির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
বক্তারা নাগরিক স্বাস্থ্যের জন্য হাতের নাগালে সুব্যবস্থনাসম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেন। তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি আরও যেসব প্রতিষ্ঠান পাবলিক টয়লেট নিয়ে কাজ করছে তাদের একই ছায়াতলে আনার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে পাবলিক টয়লেট ব্যবস্তাপনাকে কীভাবে আরও সমন্বিত, জনমুখী ও নিরাপদ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পাবলিক টয়লেট বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি অতিথিদের পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বিত নেটওয়ার্কের ভিত্তিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
ওয়াটার এইডের এক গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার সড়কপথে প্রতিদিন ৫০ লাখ মানুষ চলাচল করে যাদের জন্য টয়লেট আছে মাত্র ৪৯টি। এগুলোর অধিকাংশই আবার ব্যবহার অনুপযোগী। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ‘মেকিং দ্য পাবলিক টয়লেট ওয়ার্ক’ থিমে কাজ করছে যা বাংলাদেশে প্রথম বলে দাবি করছে সংস্থাটি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা এ পর্যন্ত ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। আর সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে ভূমিজ এগুলোর নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষ্ণাবেক্ষণের কাজ করছে। ব্র্যাকের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে ভূমিজ রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে নারীদের জন্য দেশের প্রথম পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ভূমিজের তৈরি করা ১৪ টি পাবলিক টয়েলেটে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ নিয়মিত স্যানিটেশন সেবা পাচ্ছে।
আয়োজক সংস্থা ভূমিজ-এর প্রধান নির্বাহী ফারহানা রশীদ এসময় পাবলিক টয়লেটের নানামুখী ব্যবহার তুলে ধরেন। তাদের তৈরি করা টয়লেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুব্যাবস্থার পাশাপাশি স্তন্যপান, বাচ্চাদের ডায়াপার বদলানোসহ সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান। এক প্রেজেন্টেশনে এসব টয়লেট কাদের জন্য, কেন ও কীভাবে পরিচালিত হয় তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘টয়েলেটের পেছনে ১ ডলার খরচ করলে পাঁচ ডলার পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব।’
ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান পাবলিক টয়লেট নিয়ে কাজ করা প্রতিটি সংস্থাকে নিয়ে ‘পাবলিক টয়লেট সার্ভিস অপারেটর নেটওয়ার্ক’ তৈরির আহ্বান জানান ও একে ব্যবসা হিসেবে না দেখে সার্ভিস হিসেবে দেখার আহ্বান জানান। এর উত্তরে মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত সবাই ও বাকিদের নিয়ে সবার সমন্বয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করার বিষয়ে সম্মত হন ও যত দ্রুত সম্ভব এই নিয়ে কাজ করতে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘২০১১ সালে প্রথম ঢাকায় পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৯টি পাবলিক টয়লেট আছে যা লোকাল কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো সার্ভিস চার্জ দিয়ে পরিচালিত হয়। পাবলিক টয়লেট সেবামুখী উদ্যোগ হলেও এটি বেসরকারি খাত দ্বারা পরিচালিত হলে আরও ভালো সার্ভিস দেওয়া সম্ভব।’
এসময় বক্তারা পাবলিক টয়লেটে সার্ভিস চার্জের পাশাপাশি একে আয়মুখী করতে এর উপর কফিশপ, উদ্যোগ, এলইডি বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দেওয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার উপর জোর দেন, যাতে এগুলো নিজ আয়েই চলতে পারে ও আরও ভালো সার্ভিস নিশ্চিত করতে পারে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর তানজিন ফেরদৌস বলেন, ‘ঢাকা প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি মাত্র পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এই সংখ্যা বাড়াতে ফ্রাঞ্চাইজি ব্যবস্থা চালু করা যায়।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “ডিএনসিসির উদ্যোগে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য ৬৩টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শৌচাগারের মূল্যায়ন’ যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী। নাগরিকদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ডিএনসিসি এবং বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে নির্মিত সর্বমোট ১৬৩টি গণশৌচাগার সম্পর্কিত তথ্য ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপসে সংযুক্ত করা হয়েছে।”
এসময় অনেকেই পাবলিক টয়লেট চালু হলেও সেটি পরিবেশের জন্য সহায়ক হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘অপরিকল্পিত ঢাকার অধিকাংশ ভবনেই কার্যকর সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল না থাকায় অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য সরাসরি ড্রেন কিংবা খালে পতিত হওয়ায় জলাশয়ের পানিসহ সার্বিক পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সুস্থ পরিবেশের স্বার্থেই নগরীর বাসাবাড়িগুলোতে আধুনিক সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল স্থাপন করতে হবে এবং পরিশোধন ব্যবস্থাও সচল রাখতে হবে। অপরিকল্পিত ঢাকাকে সবাই মিলে সবার বাসযোগ্য সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকায় রূপান্তরিত করতে হবে।’
দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. সাদমান সাদিকিন, ডিপিএইচই’র প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিউর রহমান, রোটারি ক্লাবের সাবেক ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রুবায়েত হোসেন, এসএনভি’র আরবান স্যানিটাইজেশন ওয়াশ সেক্টর লিডার মার্ক পেরেজ ক্যাসাস ও শহীদুল, ডিএসকের পরিচালক-ওয়াশ এম এ হাকিম, এডিবি, সাজিদা ফাউন্ডেশন, সিএফডাব্লিউডি, ইএসডোসহ নানা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরএফ/