আদাবরে ২ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৩ বোন নিখোঁজ
১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৮:১৯
ঢাকা: রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি বাসা থেকে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ তিন বোন নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই তিন বোনের খালা। এ ঘটনায় তিনি আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ওই তিন বোন আদাবরের শেখের টেক এলাকায় খালার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর বাসায় ফেরেনি বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ফুটেজ থেকে তিন বোনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাদের সন্ধান এখনো মেলেনি।
নিখোঁজ তিন বোনের খালা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, আমার বড় বোন ২০১৩ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বোনের পর পর তিনটি মেয়ে হওয়ায় দুলাইভাই আগেই অন্য এক জনকে বিয়ে করেছিলেন। বোন মার যাওয়ার পর তার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। তিন বোন আমার কাছে এবং আমার ছোট বোনের কাছেই থাকত। আদাবর ও খিলগাঁওয়ের দুই বাসায় থেকে তারা পড়ালেখা করত। তিন বোনের মধ্যে বড়টি গত বছর এসএসসি পাস করেছে। আর ছোট দুই বোন পিঠাপিঠি, ওরা দুই জনেই এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল।
তিনি জানান, গত ১৫ নভেম্বর আদাবরের বাসা থেকে দুই বোন প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী ২২ নভেম্বর তাদের পরবর্তী পরীক্ষা আছে। কিন্তু তার আগেই কাউকে না বলেই তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
ওই তিন বোনের খালা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তাদের বাসায় রেখে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাই। রাস্তায় হঠাৎ মনে পড়ে, একটি ফাইল ছেড়ে এসেছি। মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি, দরজায় তালা লাগানো। সামনে থাকা ঝুড়িতে চাবি রাখা। এরপর দরজা খুলে দেখি তিন বোনের কেউই নেই। তাদের কাপড়চোপড়, বইপত্রসহ আসবাবপত্র কিছুই নেই।
কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে তিন বোন বাসা ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন খালা। তিনি বলেন, করোনাকালে ঘরবন্দি থাকায় তিন বোন টিকটক করত। বোধহয় টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। এর মাধ্যমেই কারও প্ররোচনায় তারা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যাওয়ার সময় তারা বই-খাতা, পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ সবকিছু নিয়ে গেছে। পরে দুপুরে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে আদাবর থানায় একটি জিডি করেছি।
তিনি আরও বলেন, তিন বোনকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। নিজের ছেলে-মেয়ে আছে, সংসার আছে। সবকিছু সামলে তিন বোনের পেছনে সময় দিয়েছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। আদালতের মাধ্যমে কাস্টডি নিয়ে তাদের লালন-পালন করেছি। এখন যেখানেই গিয়ে থাকুক, তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসে এটাই আমাদের চাওয়া।
বাবার সঙ্গে তিন বোনের যোগাযোগ রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে খালা বলেন, তাদের বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি যশোরে থাকেন। সেখানেই সংসার করছেন। অনেকদিন হলো তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। তিন বোনের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। তবে গোপনে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল কি না, সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমার ছোট বোনের পরিবারের দুইটি মোবাইল ফোন তারা ব্যবহার করত। এর বাইরে গোপনে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করত কি না, সেটিও জানা নেই।
জিডির তথ্য নিশ্চিত করে আদাবর থানা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মোমিন সারাবাংলাকে বলেন, থানায় জিডি করার পর পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করেছে। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সকাল ১১টা ৪ মিনিটে প্রথমে ছোট বোন, এরপর মেজ বোন এবং সব শেষে বড় বোন ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কাজ করছি। এখনো তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারিনি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর