মেয়র জাহাঙ্গীর আজীবন বহিষ্কার, নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থা
১৯ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৩
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে সাংগঠনিকভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তাকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও হারাতে হচ্ছে তাকে।
এ ছাড়া মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠেছিল গত সেপ্টেম্বরে। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের নিয়ে জাহাঙ্গীর অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে জাহাঙ্গীর সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখে পড়তে হলো।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করেছেন। তার এমন বক্তব্য দলীয় ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও মেয়র পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। টানা টানা কয়েকদিন থেমে থেমে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেন।
ঘটনাটির খবর কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ালে সেখানেও নড়েচড়ে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ৩ অক্টোবর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে সে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়— সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। এটি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মেয়র জাহাঙ্গীর সে নোটিশের জবাব দিলে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে মেয়রের জবাব যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম চিঠিতে দাবি করেছেন— তার বক্তব্যগুলো জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এরপর বিষয়টির জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন দলের কাছে।
এদিকে সারাবাংলার গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন— গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়রের ‘কটূক্তি’ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তার ছবির ওপর ‘ক্রস চিহ্ন’ দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েও সেগুলো বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আগের অনেক অভিযোগও রয়েছে। সেগুলো নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামেও আলোচনা হয়েছে। তাকে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল বলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীরের কথাগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর প্রভাব ফেলেছে। তার এমন কটূক্তির কারণে সাধারণ জনগণের মনেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছে।’
সারাবাংলা/এনআর/একে