Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর চোখে জাহাঙ্গীর অপরিপক্ক, এই শাস্তি বিশেষ বার্তা

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৪

ঢাকা: আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ধৃষ্টতামূলক কর্মকাণ্ডকে অপরিপক্ক হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি গাজীপুরের জাহাঙ্গীরের এই শাস্তি দলের মধ্যে ‘বিভিন্নভাবে ঢুকে পড়াদের’ জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা। শেখ হাসিনা’ই এই দল ও দেশের জন্য অপরিহার্য আর কেউ অপরিহার্য নয় বলে করছেন আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সারাবাংলাকে একাধিক সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চারটার দিকে শুরু হয়ে রাত ৯টা অবধি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাঝখানে কিছু সময় বিরতি প্রদান করা হয়। বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের গেটে তা তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে দলের গাজীপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করায় তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ আজীবনের জন্য বাতিল করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সভাপতিত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

গত সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মেয়র হিসেবে পদত্যাগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুরের কয়েকটি স্থানে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম ওই সময় তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মন্তব্য করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর দলের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকার আলমকে শোকজ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। যথা সময়ের আগেই শোকজের জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি।

এদিকে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আলোচনার শুরুতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করার প্রেক্ষাপটে দলের পক্ষ থেকে তাকে করা শোকজ নোটিশ এবং তার জবাব পড়ে শোনান। পরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মতামত শোনেন। উপস্থিত তিন/চার জন্য ব্যতীত সবাই জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন এবং তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। নেতাদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলম ‘অপরিপক্ক’ বলে মন্তব্য করেন অর্থ্যাৎ অল্প বয়সে পাকলে যা হয় বলে মন্তব্য করেন। পরে তিনি সবার মতামত মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং ওবায়দুল কাদের বৈঠকের এই সিদ্ধান্তকে ‘ইন লেটার অ্যান্ড স্ক্রিপ্ট’ বলে মন্তব্য করেন।

সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দলের পক্ষ থেকে যে বার্তা দেওয়া হয়, সেটি হলো ব্যক্তি যত শক্তিশালীই হোক, দলের আদর্শের পরিপন্থী হলে কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের তিন চারজন ব্যতীত সবাই ওই ইস্যুতে কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবার সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো বিতর্কিত কথা বলে সেই ধরনের লোকদের আওয়ামী লীগ করার কোনো এখতিয়ার নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা বিতর্ক করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিতর্ক করে তারা আসলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এদের আওয়ামী লীগে থাকার কোনো এখতিয়ার নেই। এ ধরনের লোক আওয়ামী লীগের কোথাও জায়গা পাবে না।’

গাজীপুরের জাহাঙ্গীরের শাস্তির মধ্য দিয়ে এই বার্তাটি সারাদেশেই যারা আওয়ামী লীগের ভেতর ঢুকে আছে; তাদের জন্য সতর্কবার্তা। আমরা মনে করি শুধু এই ঘটনা না, যাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাদের জন্যও।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগরের মতো একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, তার বহিষ্কারে সংগঠনে প্রভাব বা বিশৃঙ্খলার শঙ্কা করছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম কামাল বলেন, ‘এই দলে ড. কামাল হোসেন চলে যাওয়ার পরে কোনো প্রভাব পড়ছে? এই দলে এক সময় আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটা অংশ চলে গেছে। সেইখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই দলকে সুসংগঠিত করে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন আবার ২০০৮ সালে জনগণের রায় নিয়ে আবার একটানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। হ্যাঁ, সাময়িকভাবে হয়ত ওই এলাকা বা কেন্দ্রীয়ভাবে যদি কেউ চলে যায় তখন হয়ত একটু থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের মূল নেতা হচ্ছে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূলের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। এখানে আমি ব্যক্তি কোনো বিষয় না। এখানে অন্য কেউ অপরিহার্য না, শেখ হাসিনা ছাড়া। আমরা মনে করি, শেখ হাসিনাই এই দলের জন্য দেশের জন্য অপরিহার্য। আর আমরা যারা আছি কেউ অপরিহার্য না। বরং আমি মনে করি, আমরা কেউ কেউ আমাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দলের একটি বোঝা।’

এদিকে গতকাল রাতে বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে আমাদের পার্টির সভাপতি বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বক্তব্য পেশ করেছে। সেটি আমি পড়ে শুনিয়েছি। কিন্তু গোটা হাউজ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছে এবং আমাদের সভাপতি সবার মতামত নিয়েছেন। সবাই তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানায় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তো বটেই এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কার হলে সেক্ষেত্রে স্থায়ী/অস্থায়ীর প্রশ্ন থাকে না। বহিষ্কার, বহিষ্কারই।’

তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অফিসিয়ালি জানানো হবে।’

বক্তব্য সুপার এডিটেড দাবি করেছিলেন, যাচাই-বাছাই করেছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মিটিং তো অনেক দিন পরে হয়েছে কাজেই আমাদের পার্টি, আমাদের পার্টির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই বিষয়টি ভালোভাবেই খোঁজ-খবর নিয়েই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, এটি সকলের জন্য বার্তা হিসাবে যাবে, দলের কেন্দ্রীয় নেতা শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যারা দলের আদর্শবিরোধী, দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কোনো বক্তব্য দেবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীর শাস্তি বিশেষ বার্তা

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর