ঢাকা কাস্টমের নজরকাড়া সাফল্য, ২৭ মামলায় আদায় ১০ কোটি টাকা
২১ নভেম্বর ২০২১ ১৩:০৫
ঢাকা: অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি এবং পণ্যের এইচএসকোড পরিবর্তনসহ নানা অনিয়মে গত ১ মাসে ২৭টি মামলা করেছে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ ইউনিট। আর এই ২৭টি মামলায় ঢাকা কাস্টম হাউস আদায় করেছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর আগে ১ মাসে এত রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড নেই।
ঢাকা কাস্টম হাউস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, সিএন্ডএফ এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি রোধ করার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানির প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় পাঁয়তারা করেছে। কিন্তু ঢাকা কাস্টম হাউসের কঠোর নজরদারি আর মনিটরিংয়ের কারণে অসাধু চক্রগুলো সুবিধা করতে পারেনি বরং অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলাও দায়ের করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস। এ ছাড়া গত ১ মাসে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক লক করা হয়েছে।
বর্তমান কমিশনার ঢাকা কাস্টম হাউসে যোগদান করেই অসাধু চক্র এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। এছাড়া যারাই অনিয়ম করছে শুল্ক করাদি আদায় করার পাশাপাশি দ্বিগুণের বেশি জরিমানাও করা হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কঠোরভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে যারাই অনিয়ম ও জালিয়াতি করবে তাদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণের বেশি জরিমানা করতে হবে। সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, জালিয়াতি এবং অনিয়ম রোধ করতেই জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গত ১ মাসে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিম ইউনিট ২৭টি মামলা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নাইচ ডেনিম মিলস। সিএন্ডএফ স্টার ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম করায় ঢাকা কাস্টম হাউস আদায় করে ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ১২৫ টাকা। অনিয়ম করায় বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে ড্রিম ডিল লিমিটেডের নামে। প্রতিষ্ঠানটির সিএন্ডএফ হিসেবে কাজ করে সাফিয়া ইন্টারন্যামনাল। মামলা হয়েছে শামসুদ্দীন স্পিনিং মিলসের নামে। সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান জি.কে রওশন ইন্টারন্যাশনাল। ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস (সিএন্ডএফ মাইক্রো ট্রেড লিমিটেড) এর কাছ থেকে আদায় হয়েছে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৬ টাকা।
আরও মামলা হয়েছে, মাস্টারলাইন টেকনোলজি (সিএন্ডএফ মাইক্রো ট্রেড লিমিটেড) বিরুদ্ধে। অনিয়ম করায় এমকায় এন্টারপ্রাইজের (সিএন্ডএফ মাসুম ট্রেডার্স) কাছ থেকে আদায় হয়েছে ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৮ টাকা। এছাড়া ৭৮ হাজার ৮৭২ টাকা আদায় হয়েছে ব্রান্ডিক্স ক্যাসুয়ালওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিএন্ডএফ এমএস/ডায়নামিক ইন্টারন্যাশনাল) কাছ থেকে। মামলা হয়েছে এসএম নিটওয়ার লিমিটেডের (সিএন্ডএফ ফারহান এন্টারপ্রাইজ) বিরুদ্ধে। ওভারসিস্ মার্কেটিং করপোরেশন (সিএন্ডএফ এথেনা ইন্টারন্যাশনাল) কাছ থেকে আদায় হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৪ টাকা।
প্রিভেনটিভ আরও মামলা করেছে, আমদানিকারক ইনভেন্ট টেকনোলজি লিমিটেডের বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ কুতুব এন্ড সন্স) মামলা করে আদায় হয়েছে ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৬ টাকা। ওভারসিস্ মার্কেটিং করপোরেশনের (সিএন্ডএফ এথেনা ইন্টারন্যাশনাল) কাছ থেকে আরও আদায় হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার ১১০ টাকা।
আবুল খায়ের স্টিলস (সিএন্ডএফ মাসুম ট্রেডার্স) এর বিরুদ্ধে মামলা করে আদায় হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৪ টাকা। ডিগনিটি টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ স্টার ইন্টারন্যাশনাল) মামলা করে আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ হাজার ৩৮৩ টাকা।
আরও মামলা করা হয়েছে, রিজেন্ট এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ মাসুম ট্রেডার্স) মামলা করে আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ২৩৩ টাকা। নাসা টাইপে ডেনিমস এর বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ লাকি ট্রেডার্স) মামলা করে আদায় করা হয়েছে ৫০ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬০ টাকা। লিবাস টেক্সটাইল লিমিটেডের বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ এফ এফ কে এন্টারপ্রাইজ) মামলা করে আদায় করা হয়েছে ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৭০৪ টাকা। এস বি সল্যুইশনের বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ সোহেল বি এম এন্টারপ্রাইজ) মামলা করে আদায় করা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৭২ টাকা। এছাড়া আরও মামলা করা হয়েছে খন্দকার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল,স্টার্কি ল্যাবরেটরিজ ইন্ডিয়া,টপ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল,বান্দো ইকো অ্যাপারেলস,নাশাত এন্টারপ্রাইজ,বিএইচএমএএল সোয়েটার্স লিমিটেড।
এ ছাড়া আরও মামলা করা হয়েছে ডেকো এক্সেসরিজ এর বিরুদ্ধে (সিএন্ডএফ সুন্দরবন) মামলা করে আদায় করা হয়েছে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৬ টাকা। সবমিলে গত ১ মাসে শুধু ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ ইউনিট অনিয়মের মামলা করেই প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (প্রিভেনটিভ) মো. সানোয়ারুল কবীর বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং কমিশনার (ঢাকা কাস্টম হাউস) এর নির্দেশনায় আমরা কাজ করছে, যে কোনো ধরনের অনিয়ম, জালিয়াতি এবং মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য খালাসের চেষ্টা করায় গত ১ মাসে ২৭টি মামলা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব এবং উন্নয়নকে ত্বরান্তিত করতে কাজ করায় যারাই অনিয়ম এবং অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এসজে/একে