Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুই শিশু বাবার কাছে থাকবে, জাপান থেকে এসে দেখে যেতে পারবেন মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৫৯

ঢাকা: জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান দম্পতির দুই কন্যা শিশু এখন থেকে বাবার কাছেই থাকবে। তবে তাদের মা বছরে তিনবার জাপান থেকে এসে সন্তানদের দেখে যেতে পারবেন। প্রতিবার মা সন্তানদের সঙ্গে ১০ দিন সময় কাটাতে পারবেন।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান-এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তাদের সন্তানদের জিম্মা নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সন্তানদের জিম্মার সুযোগ নিতে বাবা-মা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। এ সংক্রান্ত রিটের রায় হলো আজ।

বিজ্ঞাপন

রায়ে আদালত বলেছেন, এই রিট মামলাটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে থাকেন এবং কাজ করেন, তাই তিনি নিজের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে বছরে তিনবার ১০ দিন করে মোট ৩০ দিন একান্তে দুই শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এই আসা যাওয়া এবং থাকার খরচ শিশুদের বাবা বহন করবেন।

একইসঙ্গে গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থানকালে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত খরচ এবং মামলা পরিচালনায় যে খরচ হয়েছে তা বাবদ শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ ১০ লাখ নগদ টাকা আগামী সাতদিনের মধ্যে নাকানো এরিককে পরিশোধ করবেন।

এ ছাড়া প্রতি মাসে দুইবার (সপ্তাহের ছুটির দিনে) নাকানো এরিকো দুই সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারবেন। এর বাইরেও মা চাইলে তার সুবিধামতো সময়ে সন্তানদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তার নিজেকেই এর বহন করতে হবে।

প্রতি তিন মাস পর পর সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তাকে শিশুদের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জাপানে থাকা ছোট মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২১ নভেম্বর) দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে জাপানি মায়ের রিট চলমান রেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, দুই শিশুর বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

রায়ের পর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘এই রায়ে শিশুদের জয় হয়েছে বলে আমি মনে করি। দুই বাচ্চা তার বাবার হেফাজতে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে দুই শিশুর মতামত খুবই কাজে লেগেছে। দুই শিশু বারবার আদালতকে বুঝাতে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, যে তাদের ইচ্ছাটা কী। গত বৃহস্পতিবার আদালত দুই শিশুকে ডেকে এনেছিল এবং তাদের সাথে কথা বলেছেন আদালত। আমি মনে করব এখানে বাবা-মায়ের হার-জিত কিছুই নয়। এই রায় বাচ্চাদের জয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চারা কোথায় থাকতে চান, কোথায় ভালো থাকতে চান, সুস্থ থাকতে চান, স্বাভাবিক থাকতে চান। এটা বাচ্চারা বেছে নিয়েছে। এখানে বাচ্চাদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা আজকাল চাইল্ড রাইটস এর (শিশু অধিকারের) কথা বলি। চাইল্ড রাইটস যদি হয়। এর বড় একটি উদাহরণ হলো এটি।’

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আমরা আজকের আদেশের লিখিত রায় প্রকাশের পর তা পর্যালোচনা করে আপিল করবো কিনা সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন, রিট পিটিশনটি এখানে চলমান থাকবে। এই মামলাটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এরিকোর মামলাটি এখানে পেন্ডিং থাকবে। মামলাটি পেন্ডিং থাকা অবস্থায় উভয়পক্ষের সুবিধা-অসুবিধা আদালতকে অবহিত করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাবা-মার দ্বন্দ্ব কমে যাক এটা আমরা চেয়েছিলাম। তারপরও বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। শিশুরা কার হেফাজতে থাকবে সেই বিষয়ে একটি আদেশ হয়েছে। মামলাটির এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।’

এর আগে গত ১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু বাংলাদেশে তার বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন নাকি মা নাকানো এরিকোর সঙ্গে জাপানে চলে যাবেন সে বিষয়ে শুনানি শেষ হয়।

গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্লাটের ভাড়া উভয়পক্ষ বহন করবে।

পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন রাজধানীর গুলশানের ফ্লাটে দুই শিশুর সঙ্গে জাপানি নাগরিক মা নাকানো এরিকো রাতসহ ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ শুধু দিনের বেলা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ে ওই ফ্লাটের ভাড়া শিশুদের বাবা-মাকে সমানভাবে বহন করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী এতদিন বাবা-মা শিশুদের সঙ্গে অবস্থান করে আসছিলেন।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর এক শুনানিতে উভয়পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন আদালত। কিন্তু তারা সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। সমাঝোতা না হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর আরও সময় দেন আদালত।

পরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সমঝোতার জন্য দুপক্ষের আইনজীবীরা আবার বৈঠক করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাপান থেকে আসা সেই দুই শিশুকে গুলশানের বাসায় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মা-বাবার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন আদালত।

এই সময়ের মধ্যে উভয়পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আদালত। আর এই সমঝোতা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবার পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদকে। আর রোকনউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসেন মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির।

তবে নির্ধারিত সময়ে দুপক্ষ আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।

এর আগে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গুলশানের একটি ভাড়া বাসায় থাকছে জাপান থেকে আসা ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশু।

গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। এ আদেশের অংশবিশেষ সংশোধন চেয়ে কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে শিশুদের মা গত ৬ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন।

ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনা দেন। এতে দুই মেয়ের সঙ্গে চার রাত থাকা ও তাদের নিয়ে বাসার বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পান মা ও বাবা।

এর আগে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন নাকানো এরিকো। পরে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন ওই জাপানি চিকিৎসক। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ এ রায় দেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

ইমরান শরীফ এরিকো জাপানি শিশু টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর