Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু অধিকারের বড় উদাহরণ— রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ নভেম্বর ২০২১ ২১:২৭

হাইকোর্টে শরীফ-এরিকোর ২ সন্তান, ইনসেটে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ

ঢাকা: জাপানি মায়ের দুই শিশু বাবার হেফাজতে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়কে শিশু অধিকার বাস্তবায়নের বড় একটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন শিশু দুইটির বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমরা আজকাল শিশু অধিকারের (চাইল্ড রাইটস) কথা বলি। চাইল্ড রাইটসের কথা বললে এটি তার একটি বড় উদাহরণ। এই রায়ে বাচ্চাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশি নাগরিক শরীফ ইমরানের সঙ্গে তার জাপানি স্ত্রী নাকানো এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তাদের সন্তানদের জিম্মা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সন্তানদের জিম্মার সুযোগ নিতে বাবা-মা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।

উচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত রিটের রায় দিয়েছেন আজ রোববার (২১ নভেম্বর)। রায়ে আদালত বলেন, এই দম্পতির দুই কন্যাশিশু এখন থেকে বাবার কাছে থাকতে। তবে তাদের মা বছরে তিন বার জাপান থেকে এসে সন্তানদের দেখে যেতে পারবেন। প্রতিবার তিনি সন্তানদের সঙ্গে ১০ দিন সময় কাটাতে পারবেন। এই সময়ে এরিকোর বাংলাদেশ ভ্রমণের পূর্ণ খরচ বাবা বহন করবেন। এছাড়া মাসে দুই বার (সপ্তাহের ছুটির দিনে) নাকানো দুই সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারবেন। এর বাইরেও মা চাইলে তার সুবিধামতো সময়ে সন্তানদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তার নিজেকেই এর খরচ বহন করতে হবে।

এই রায়ের শুরুতে আদালত বলেন, হৃদয় বিদারক কথা হলো— আমরা আজ যে রায় বা আদেশ দিই না কেন, কোনো না কোনো পক্ষ ভিকটিম (ক্ষতিগ্রস্ত) হবেন। তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই সন্তান। আমরা আশা করব, মা-বাবা দুই পক্ষই ভবিষ্যতে যেন আরও গঠনমূলক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করেন।

আরও পড়ুন-

রায়ের পর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, এই রায়ে শিশুদের জয় হয়েছে বলে আমি মনে করি। দুই বাচ্চা তার বাবার হেফাজতে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে দুই শিশুর মতামত খুবই কাজে লেগেছে। দুই শিশু বারবার আদালতকে বুঝাতে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে তাদের ইচ্ছাটা কী। গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) আদালত দুই শিশুকে ডেকে এনেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি মনে করব, এখানে মা-বাবার হার-জিত কিছুই নয়। এই রায় বাচ্চাদের জয়।

তিনি আরও বলেন, বাচ্চারা কোথায় থাকতে চায়, কোথায় ভালো থাকতে চায়, সুস্থ থাকতে চায়, স্বাভাবিক থাকতে চায়— এটি বাচ্চারাই বেছে নিয়েছে। এখানে বাচ্চাদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা আজকাল শিশু অধিকারের যে কথা বলি, এটি তার বড় একটি উদাহরণ।

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম আরও বলেন, আমাদের উচ্চতর আদালতেও এ ধরনের রায় রয়েছে। বাচ্চাদের ওপর নির্ভর করে বিচারক রায় দিয়েছেন। আমার মনে হয় এখানে বাবা জয়ী হয়েছেন নাকি মা জয়ী হয়েছেন, সেটি নয়; এতে বাচ্চাদের জয় হয়েছে। বাচ্চাদের মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমরা আজকের আদেশের লিখিত রায় প্রকাশের পর তা পর্যালোচনা করে আপিল করবো কি না, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেব। একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন, রিট পিটিশনটি এখানে চলমান থাকবে। এই মামলাটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এরিকোর মামলাটি এখানে পেন্ডিং থাকবে। মামলাটি পেন্ডিং থাকা অবস্থায় উভয়পক্ষের সুবিধা-অসুবিধা আদালতকে অবহিত করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মা-বাবার দ্বন্দ্ব কমে যাক— এটা আমরা চেয়েছিলাম। তারপরও বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। শিশুরা কার হেফাজতে থাকবে, সে বিষয়ে একটি আদেশ হয়েছে। মামলাটির এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

এর আগে, রায়ে আদালত বলেন, এই রিট মামলাটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থানকালে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত খরচ এবং মামলা পরিচালনায় যে খরচ হয়েছে, সেই খরচ বাবদ শিশুদের বাবা ইমরান শরীফকে ১০ লাখ নগদ টাকা আগামী সাত দিনের মধ্যে নাকানো এরিক বরাবর পরিশোধ করতে হবে।

প্রতি তিন মাস পর পর সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তাকে শিশুদের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।

এদিকে, জাপানে থাকা ছোট মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। রোববার দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে জাপানি মায়ের রিট চলমান রেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, দুই শিশুর বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এর আগে, গত ১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু বাংলাদেশে তার বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে নাকি মা নাকানো এরিকোর সঙ্গে জাপানে চলে যাবে, সে বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। এরও আগে, গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন, মা-বাবাসহ রাজধানীর গুলশানের চার রুমের একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্ল্যাটের ভাড়া দুই পক্ষই বহন করবে।

পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন, রাজধানীর গুলশানের ফ্ল্যাটে দুই শিশুর সঙ্গে জাপানি নাগরিক মা নাকানো এরিকো রাতসহ ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ শুধু দিনের বেলা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া শিশুদের মা-বাবাকে সমানভাবে বহন করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী এতদিন মা-বাবা শিশুদের সঙ্গে অবস্থান করে আসছিলেন।

এদিকে, ১৬ সেপ্টেম্বর এক শুনানিতে উভয় পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন আদালত। সমঝোতা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবার পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদকে। রোকনউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসেন মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। সমাঝোতা না হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর আরও সময় দেন আদালত। পরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সমঝোতার জন্য দুই পক্ষের আইনজীবীরা আবার বৈঠক করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি।

গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন নাকানো এরিকো। পরে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন ওই জাপানি চিকিৎসক। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ এ রায় দেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

জাপানি ২ শিশু নাকানো এরিকো শরীফ ইমরান শিশু অধিকার শিশুদের জিম্মা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর