মন্ত্রী জানাননি সংসদে, সচিব বলে দিলেন ভ্যাকসিনের খরচ
২১ নভেম্বর ২০২১ ২২:৪৫
ঢাকা: উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে ‘নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টে’র কারণ দেখিয়ে খোদ জাতীয় সংসদে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন কেনার খরচ প্রকাশ করেননি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে এর তিন দিনের মাথায় সেই খরচ জানিয়ে দিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
সচিব জানান, এই ভ্যাকসিন কিনতে সরকার এ পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। তবে এর মাঝে উড়োজাহাজে ভ্যাকসিন পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ ধরা হয়নি।
রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পাথওয়েজ টু রিডিউস হাউজহোল্ড আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান সচিব।
এর আগে, গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়, এক কোটি এক লাখ ৫০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। তবে ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে ‘নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ রয়েছে। এ কারণে সংসদে ভ্যাকসিন কেনা বাবদ অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।
তিন দিনের মাথায় রোববার চিকিৎসা ব্যয়বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু জানাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিটের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কিনতে সরকার এ পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। এর মধ্যে উড়োজাহাজে ভ্যাকসিন আনাসহ অন্যান্য খরচ ধরা হয়নি। এ পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা নিশ্চিত হয়েছে। আরও ৮ কোটি ডোজ কেনা হচ্ছে।
তবে কোন কোম্পানির কোন ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিনের জন্য কত খরচ হয়েছে, ভ্যাকসিনের সব চালানের ক্ষেত্রে দাম একই কি না— এসব বিষয়ে কোনো তথ্য সুনির্দিষ্ট করেননি সচিব।
একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৯ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ প্রথম ডোজ এবং প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ পূর্ণ ডোজ (দুই ডোজ) ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
হেলথ ইকোনমিকস ইউনিটের মহাপরিচালক মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে, মানুষের ব্যয় কমাতে কী করা উচিত— এ দু’টি বিষয়ে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে, ১৮ নভেম্বর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে করোনাভাইরাসের কত ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেজন্য কত টাকা খরচ হয়েছে— এ তথ্য জানতে চান। ওই সময় ভ্যাকসিন কিনতে খরচের তথ্য জানালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভ্যাকসিন সংগ্রহের তথ্য দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে সিনোফার্মার সাত কোটি ৭০ লাখ ডোজ, সিনোভ্যাকের সাত কোটি ৫১ লাখ ডোজ, ভারত থেকে তিন কোটি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ সিনোফার্মের ভ্যাকসিন রয়েছে।
খরচের অঙ্ক না জানালেও মন্ত্রী বলেন, চীন-ভারত ও কোভ্যাক্স থেকে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই কেনা হয়েছে ভ্যাকসিন।
এদিকে, ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যয় জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, এক কোটি এক লাখ ৫০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ তিন হাজার টাকা হিসেবে মোট তিন হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
ভ্যাকসিনের খরচ লোকমান হোসেন মিয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব