৮৫% টেস্ট সরকারি হাসপাতালে হয় না, ওষুধ পান না ৯৭% রোগী
২১ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৫৯
ঢাকা: দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে ৯৭ শতাংশ রোগী ওষুধ পান না। তাদের ওষুধ কিনতে হয় বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে। একইভাবে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে সরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষাই রোগীকে করতে হয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এর ফলে বেড়ে যায় রোগীর চিকিৎসা ব্যয়। অতিরিক্ত এই খরচের কারণে ১৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকেই চিকিৎসাবঞ্চিত থাকতে হয়। অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়েই প্রতি বছর নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েন ৮৬ লাখ মানুষ।
রোববার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘নিজ পকেট থেকে গৃহস্থালি ব্যয় সংকোচনের কৌশল’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। চিকিৎসা ব্যয় বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন তথ্য জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. নুরুল আমিন ‘রোগীর নিজ পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য উচ্চ ব্যয়ের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন।
গবেষণা প্রবন্ধে জানানো হয়, রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের প্রধান উৎস হলো ওষুধ। চিকিৎসা খাতের মোট ব্যয়ের ৬৪ শতাংশই খরচ হয় ওষুধ কিনতে। আর হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে ১২ শতাংশ ও বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেওয়ার মাধ্যমে ১১ শতাংশ খরচ হয়। এ ছাড়া রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাতে ব্যয় আট শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চিকিৎসা খাতে রোগীর পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে একেকজন রোগীকে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ খরচ করতে হয় নিজেদের। ভারতে এই হার ৬৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ৫১ শতাংশ, মালদ্বীপে ২১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম ভুটানে ১৩ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় এবং শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। এছাড়া, সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পুরোপুরি দেওয়া হয় না এবং রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না। ফলে সরকারি হাসপাতালে সেবা নেন দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ রোগী। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ৯ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নেন। আর ৬০ শতাংশ রোগীই চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন হাতুড়ে ডাক্তার কিংবা ওষুধের দোকানিদের কাছ থেকে অথবা নিজেই ওষুধ কিনে।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশে মাত্র তিন শতাংশ রোগী সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ পান। ফলে অধিকাংশ রোগীকে বেসরকারি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয়। মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে হয়ে থাকে। বাকিদের বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেবা নিতে হয়। এতে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় বেড়ে যায় এবং প্রায়ই রোগী আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন।
গবেষণায় আরও জানানো হয়, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধ কেনার সুযোগ থাকায় এবং ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিপণনের ফলে স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি পল্লি ও হাতুড়ে ডাক্তাররাও ব্যবস্থাপত্রে অতিমাত্রায় ওষুধ লেখেন।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করায় রোগীর ব্যয় বেড়ে যায় উল্লেখ করে গবেষণায় জানানো হয়, জরুরি ওষুধের তালিকা সংশোধন ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবস্থাপত্রে প্রটোকল অনুসরণ করে কোম্পানির ওষুধের ‘ব্র্যান্ড নাম’ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘জেনেরিক নাম’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে এই ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।
গবেষণা ফলাফলের তথ্য বলছে, বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাক্রিডিটেশন পদ্ধতি এবং এর সেবা মান ও মূল্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় সেবা গ্রহণকারী জনগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে বিষয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টি ও কখনো কখনো আস্থার ঘাটতি তাদের দেশের পরিবর্তে বিদেশ থেকে সেবা নিতে উৎসাহিত করে। এভাবে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর