‘হাফ পাস’ আন্দোলনে হামলা, সোমবার শাহবাগ অবরোধ
২৩ নভেম্বর ২০২১ ১৪:২৬
ঢাকা: গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’ নিশ্চিত করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনাসহ হাফ পাস নিশ্চিত, দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধের ডাক দিয়েছে আট ছাত্র সংগঠন। আগামী সোমবার (২৯ নভেম্বর) শাহবাগ অবরোধ করবেন তারা।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ পরবর্তী এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি— গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’ তথা অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে; জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে হবে; এবং বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে।
সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীদের মঙ্গলবারের আন্দোলন-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন আট ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সংগঠন আটটি হলো— বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন ও বিল্পবী ছাত্র-যুব আন্দোলন।
এর আগে, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ নিশ্চিতের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করে আট ছাত্র সংগঠন। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা স্লোগান ও বক্তব্যে দাবি পূরণের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এদিকে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও জমা হয়ে সমাবেশ করছিল।
এর মধ্যেই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে একটি বাস ভাঙচুরের শিকার হয়। দুপুর ১টার কিছু পরে ল্যাবএইড সিগন্যাল থেকে একটু সামনে ডা. রেফাতুল্লাহ মার্কেটের উল্টো দিকে পার্ক করা অবস্থায় হিমাচল পরিবহনের একটি বাসের জানালা ভাঙচুর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে বাঁশ-কাঠ-লাঠিসোটা হাতে ইউনিফর্ম পরা ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় একদল তরুণ। এসময় সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও অবস্থান করছিলেন। তারা দুই পক্ষকে সরিয়ে হামলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এসময় ঢাকা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের কলেজের দিকে চলে যায়। কিছু সময় পরে তারা ফের সংগঠিত হয়ে সায়েন্স ল্যাব হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে ঢাকা কলেজের দিক থেকে কয়েক দফা ধাওয়া দেওয়া হয় তাদের।
নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের কেউ বাস ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নয়। ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাস ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ী করেন তারা। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি, ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে কাউকে চিকিৎসার জন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার খবর শুনে নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাব হয়ে শাহবাগের দিকে মিছিল করতে থাকে ছাত্র সংগঠনগুলো। মিছিলে তারা ‘হাফ পাস’ নিশ্চিত করা, জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম কমানো, বাসের বাড়তি ভাড়া প্রত্যাহার ছাড়াও হামলাকারীদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। মিছিল শাহবাগ হয়ে টিএসসি গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে ছাত্রনেতারা আগামী রোববারের (২৮ নভেম্বর) মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটাম দেন। এর মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে সোমবার (২৯ নভেম্বর) শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। এইসঙ্গে রাজধানীসহ দেশের সব শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবরোধ সমাবেশ করারও আহ্বান জানান তারা।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে ডিএমপি রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, সায়েন্স ল্যাব মোড়ে তিনটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিল। দুপুর ১টার পরে ঢাকা কলেজ থেকে ছাত্ররা এসে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে প্রথমে আইডিয়াল কলজেসব বাকি শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের দিকে সরে যায়। পরে তারা আবারও সংগঠিত হয়ে এগিয়ে আসে। এসময় আমরা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠিয়েছি।
ওসি আরও বলেন, হামলাকারীদেরও ঢাকা কলেজের দিকে ফেরত পাঠানো হয়। ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন। তবে হামলাকারী কাউকে কেউ চিহ্নিত করতে পারেননি। তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সারাবাংলা/আরএফ/এএম/টিআর