ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন পেল বঙ্গভ্যাক্স
২৩ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৪৬
ঢাকা: দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ‘বঙ্গভ্যাক্স’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের এই অনুমোদন দিয়েছে।
বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্স প্রয়োগের ফল গ্লোব বায়োটেক জমা দিয়েছিল। সেই ফল পর্যালোচনা করে মানবদেহে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ড. রুহুল আমিন বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মানবদেহে প্রয়োগের বিষয়ে নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে। এটিকে ‘ফেজ ওয়ান ট্রায়াল’ও বলা হয়। এক্ষেত্রে আসলে আমরা নৈতিক অনুমোদনটি দিয়ে থাকি। এরপর বাকি অনুমোদন দেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। আমরা শুধু ‘ফেজ ওয়ান ট্রায়ালে’র নৈতিক অনুমোদন দিয়েছি।
গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আজই (মঙ্গলবার) বিএমআরসি’র অনুমোদন পেয়েছি ইথিক্যাল ট্রায়ালের জন্য। এখন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আমরা শিগগিরই আবেদন করব। অধিদফতরের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে। অনুমোদন পাওয়ার পরে প্রটোকল অনুযায়ী আমরা হিউম্যান ট্রায়ালে যাব।
আরও পড়ুন-
- মেডিকেল জার্নালে বঙ্গভ্যাক্সের গবেষণাপত্র প্রকাশ
- ব্যানকোভিডের নাম ‘বঙ্গভ্যাক্স’ রাখার প্রস্তাব স্বাস্থ্য সচিবের
- বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গ্লোব বায়োটেকের প্রটোকল জমা
- আন্তর্জাতিক প্রটোকল সম্পন্ন না করলে স্বীকৃতি পাবে না বঙ্গভ্যাক্স
- ‘বঙ্গভ্যাক্স’ ট্রায়ালের অনুমতির আগে আরও কিছু শর্ত বিএমআরসির
- বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল বিএমআরসিতে
বিএমআরসি’র এই অনুমোদনের পর এবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য গ্লোব বায়োটেককে অনুমতি নিতে হবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছ থেকে। অধিদফতর এই অনুমতি দিলে তারা প্রটোকল অনুযায়ী কোনো একটি কনটাক্ট রিসার্চ অরগানাইজেশনের (সিআরও) অধীনে মানুষের শরীরে বঙ্গভ্যাক্স প্রয়োগ করতে পারবে।
এর আগে, গত ১ আগস্ট থেকে বানরের দেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। এই পরীক্ষার ফল সংগ্রহ শেষ হয় ২১ অক্টোবর। পরে সেটি বিএমআরসি’তে জমা দেয় গ্লোব বায়োটেক। ওই সময় বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়াল সফল দাবি করে গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রায়ালে দেখা গেছে— এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, তার সবগুলোর বিরুদ্ধেই বঙ্গভ্যাক্স শতভাগ কার্যকর।
ড. মহিউদ্দিন আরও বলেন, বানর ও মানুষের মধ্যে জিনগত বেশ মিল রয়েছে। বানরে বঙ্গভ্যাক্স সম্পূর্ণ নিরাপদ ও শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী, বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও একইভাবে কাজ করবে। বিএমআরসি’র কাছ থেকে নীতিগত অনুমোদন মিললে আমরা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দিতে পারব।
গত বছরের ২ জুলাই দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় গ্লোব বায়োটেক। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ৮ মার্চ থেকেই তারা এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কাজ শুরু করে। ওই বছরেরই ৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক জানায়, প্রাণীদেহে (ইঁদুর) সফলভাবে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে। পরে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি খরগোশের ওপরও বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছেন জানিয়ে গ্লোব বায়োটেক এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রটোকল জমা দেয় বিএমআরসিতে।
এরপর বিএমআরসির চাহিদা অনুযায়ী সংশোধিত প্রটোকল জমা দেওয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। পরে ২২ জুন বিএমআরসি মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়। শর্তে বলা হয়, মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির দেহে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করে তার ফল বিএমআরসি’কে জানাতে হবে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্লোব বায়োটেক গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড বঙ্গভ্যাক্স বিএমআরসি