Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপে বঙ্গভ্যাক্স পাবেন ৬০ জন

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২১ ০০:২৫

ঢাকা: দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এই ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফেজ-১ তথা প্রথম ধাপের জন্য এই অনুমোদ দিয়েছে। জানা গেছে, এই ধাপে ৬০ জনের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

গ্লোব বায়োটেক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি পেলে প্রথম ধাপের এই ট্রায়াল শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অরগানাইজেশন (সিআরও) হিসেবে ট্রায়ালটি পরিচালনা করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ভ্যাকসিন প্রস্তুতের এই প্রথম ধাপে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ দিন সময়সীমা পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিএমআরসি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিনের সই করা এক চিঠিতে বঙ্গভ্যাক্সের ফেজ-১ ট্রায়ালের অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়। বিএমআরসি পরিচালক সারাবাংলাকে বলেন, বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্স প্রয়োগের ফল গ্লোব বায়োটেক জমা দিয়েছিল। সেই ফল পর্যালোচনা করে মানবদেহে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে ফেজ-১ (প্রথম ধাপ) ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন পেল বঙ্গভ্যাক্স

তিনি বলেন, মানবদেহে প্রয়োগের আগে পরীক্ষামূলকভাবে বানরের ওপর বঙ্গভ্যাক্স প্রয়োগের শর্ত দেওয়া হয়েছিল গ্লোব বায়োটেককে। তারা ১ নভেম্বর বিএমআরসির কাছে বানরের ওপর প্রয়োগের ফল জমা দিয়েছে। রোববার (২১ নভেম্বর) আমাদের অনুমোদন কমিটির সভায় সেই ফলাফল বিশ্লেষণ করে ফেজ-১ ট্রায়ালে যাওয়ার জন্য নৈতিক ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা তাদের কেবল নৈতিক অনুমোদনটি দিয়েছি। এই ধাপে যাওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, বঙ্গভ্যাক্সের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৬০ জনকে ভ্যাকসিন দিয়ে তারা ফেজ-১ ট্রায়াল শুরু করবে। এক্ষেত্রে তাদের ৩৫ দিন সময় লাগবে বলেও জানানো হয়েছে। গ্লোব বায়োটেক এই ট্রায়ালের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিয়েছে। সেখানে করোনা রোগীর দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

গ্লোব বায়োটেকের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন বিএসএমএমইউ ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আজ (মঙ্গলবার) ফেজ-১ ট্রায়াল চালানোর নৈতিক অনুমোদন বিষয়ক চিঠি পেয়েছি। শিগগিরই আমরা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে ফেজ-১ ট্রায়াল শুরুর জন্য আবেদন করব। আশা করছি অনুমতি পাওয়ার ৩৫ দিনের মাঝেই আমরা এই ট্রায়াল শেষ করতে পারব। এই ট্রায়ালটি অনুমোদন পাওয়ার পর বিএসএমএমইউয়েই পরবর্তী ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

বঙ্গভ্যাক্সের কার্যকারিতা বিষয়ে ডা. স্বপ্নীল বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রাণীদেহে চালানো ট্রায়াল থেকে পাওয়া ফল বিবেচনা করে দেখেছি, এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। সেই হিসাবে মানবদেহেও এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে অ্যান্টিবডি পাওয়ার কথা। এছাড়া নতুনভাবে বানরের দেহে ট্রায়াল করে যে ফলাফল জমা দিয়েছি, তাতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে আমরা আশাবাদী, এটিই প্রথম ভ্যাকসিন যেটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করবে।

আরও পড়ুন-

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের দেশে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এমআরএনএ ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে অনেক দেশেই বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে এমআরএনএ ভ্যাকসিন ও অ্যাডিনো ভাইরাস ভ্যাকসিন— একটি আরেকটির ক্ষেত্রে বুস্টারিং করা যায়, মডার্নার সঙ্গে যে কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার মিক্স-আপ করা হয়েছে কিছু স্থানে। সুতরাং এটি আমাদের একটি সুবিধা।

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব জানান, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যও তারা ৩৫ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। পরবর্তী ট্রায়ালের ক্ষেত্রে স্যাম্পল সাইজের ওপর নির্ভর করে সময় নির্ধারণ করা হবে। আপাতত তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে ফেজ-১ ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আজই (মঙ্গলবার) বিএমআরসি’র অনুমোদন পেয়েছি ইথিক্যাল ট্রায়ালের জন্য। এখন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আমরা শিগগিরই আবেদন করব। অধিদফতরের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে। অনুমোদন পাওয়ার পরে প্রটোকল অনুযায়ী আমরা হিউম্যান ট্রায়ালে যাব।

এর আগে, গত ১ আগস্ট থেকে বানরের দেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। এই পরীক্ষার ফল সংগ্রহ শেষ হয় ২১ অক্টোবর। পরে সেটি বিএমআরসি’তে জমা দেয় গ্লোব বায়োটেক। ওই সময় বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়াল সফল দাবি করে গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রায়ালে দেখা গেছে— এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, তার সবগুলোর বিরুদ্ধেই বঙ্গভ্যাক্স শতভাগ কার্যকর।

ড. মহিউদ্দিন আরও বলেন, বানর ও মানুষের মধ্যে জিনগত বেশ মিল রয়েছে। বানরে বঙ্গভ্যাক্স সম্পূর্ণ নিরাপদ ও শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী, বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও একইভাবে কাজ করবে। বিএমআরসি’র কাছ থেকে নীতিগত অনুমোদন মিললে আমরা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দিতে পারব।

গ্লোব বায়োটেকের এই কর্মকর্তা জানান, এই ভ্যাকসিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরই প্রাণীদেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আর এই ভ্যাকসিন ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। বুস্টার ডোজ হিসেবেও বঙ্গভ্যাক্স প্রয়োগ করা যাবে বলে জানান তিনি।

এর আগে, গত বছরের ২ জুলাই দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় গ্লোব বায়োটেক। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ৮ মার্চ থেকেই তারা এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কাজ শুরু করে। ওই বছরেরই ৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক জানায়, প্রাণীদেহে (ইঁদুর) সফলভাবে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে। পরে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি খরগোশের ওপরও বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছেন জানিয়ে গ্লোব বায়োটেক এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রটোকল জমা দেয় বিএমআরসিতে।

এরপর বিএমআরসির চাহিদা অনুযায়ী সংশোধিত প্রটোকল জমা দেওয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। পরে ২২ জুন বিএমআরসি মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়। শর্তে বলা হয়, মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির দেহে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করে তার ফল বিএমআরসি’কে জানাতে হবে।

পরে বানরের দেহে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেয় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি দাবি জানানো বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। এখন পর্যন্ত তারাই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের সর্বোচ্চ তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদনপ্রার্থী তালিকায় রয়েছে। ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের তিনটি ভ্যাকসিনকে অনুমোদনপ্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্লোব বায়োটেক গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেজ-১ ট্রায়াল বঙ্গভ্যাক্স বিএমআরসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর