সংসদের আইসিটির অবকাঠামো নির্মাণে ফের বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ
২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৯:০৪
ঢাকা: ফের ব্যয় বাড়ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের। একইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে আরও দুই বছর। ফলে ৪ বছরের এ প্রকল্পটি ঠেকেছে প্রায় ৬ বছরে। এ জন্য ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানব সম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছ ৮০ শতাংশ। এ অবস্থায় সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্স নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চগতিসম্পন্ন ল্যান ও সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জামাদিসহ নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন, ডাটা সেন্টারের মান উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সহায়তা দেওয়া হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
সূত্র জানায়, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ২০১৭ সালের জুলাই হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীতেও একই ছিল। অর্থাৎ ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাড়িয়ে এখন তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয় সংসদকে ক্রমান্বয়ে একটি ই-পার্লামেন্টে পরিণত করে সংসদের সকল কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে আইসিটি ব্যবস্থা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানব সম্পদ ও পেশাগত উন্নয়ন এবং আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি করা হবে যা ই-গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে অটোমেটেড বিজনেস ও ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মধ্যমে বাস্তয়নের জন্য অনুমোদিত হয়। কিন্তু নানা রকম সমস্যার কারণে প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে।
প্রকল্পের আওতায় এরমধ্যেই জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চগতিসম্পন্ন ল্যান, আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ক্রয় ও স্থাপন, ৩টি সফটওয়্যার প্রস্তুত, সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি, ভিডিও কনফারেন্সিং ডিভাইস ইত্যাদি ক্রয় ও স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় অতিরিক্ত ল্যান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ, ডাটা সেন্টারের জন্য বিশেষ ধরনের এয়ার-কন্ডিশনার, স্টোরেজ ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং সুইচ ইত্যাদি সংযোজন করে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং ২ বছর মেয়াদ অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তকরণ: প্রিসিশন টাইপ এয়ার কন্ডিশন ক্রয় ২টি, স্টোরেজ এরিয়া নেটওয়ার্ক (এসএএস) ফর অডিও, ভিডিও এবং ডকুমেন্ট আরসিভিং স্থাপন, ওয়েব সিকিউরিটি স্থাপন এবং আপডেট নেটওর্য়াক সুইস অ্যান্ড আদারস স্থাপন ইত্যাদি জাতীয় সংসদের চাহিদার জন্য প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সফটওয়্যার তৈরি ও আনুষঙ্গিক সার্ভিস দেওয়া: প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য মোট ১৯টি সফটওয়্যারের মধ্যে ৩টির ক্রয় কার্যক্রম শেষ হয়েছে এবং পরিপূর্ণভাবে সচল আছে। এছাড়া, পার্লামেন্ট রিসোর্স প্ল্যানিং অ্যান্ড সলিউশন (পিআরপি) সফটওয়্যার আপ্লিকেশনটির মোট ১১টি মডিউলের মধ্যে ৮টি মডিউল প্রস্তুকরণ কার্যক্রম শেষ করে সচল করা হয়েছে। অবশিষ্ট সফটওয়্যার উন্নয়নের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন।
প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ ও সেমিনার আয়োজন: প্রকল্পের আওতায় দক্ষ এবং কারিগরি ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্পদ গড়ে তোলার ৩৫টি অত্যাবশ্যকীয় প্রশিক্ষণ, সেমিনারের সংস্থান রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি অভ্যন্তরীণ এবং একটি বৈদেশিকসহ মোট ১২টি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট প্রশিক্ষণ সম্পন্নের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্স নিরবচ্ছিন্ন এবং উচ্চগতিসম্পন্ন ল্যান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং সাইবার সিকিউরিটি, ভিডিও কনফারেন্সিং, ক্যামেরা ও মনিটরিং ইত্যাদি সরঞ্জাম স্থাপন। এছাড়া সংসদ সদস্যদের জন্য ল্যাপটপ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের জন্য ডেস্কটপ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হবে।
আরও যেসব কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে: জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ডাটা সেন্টারটি টিয়ার-২ হতে টিয়ার-৩ তে উন্নীতকরণ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ স্থাপন। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণকে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া। সংসদ সচিবালয়ের জন্য পার্লামেন্ট রিসোর্স প্ল্যানিং (পিআরপি) সফটওয়্যার মডিউল প্রস্তুতকরণ। সংসদের সংসদীয় কার্যক্রমকে পরিপূর্ণরুপে ডিজিটালাইজড করার জন্য ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন অ্যান্ড প্ল্যানিং ল্যাব (ডিএসডিএল) সফটওয়্যার মডিউল এবং বিভিন্ন কাস্টমাইজড সফটওয়্যার মডিউল ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান প্রস্তুত করতে হবে। জাতীয় সংসদের প্রথম সংসদ হতে ১১তম সংসদ পর্যন্ত সকল কার্যক্রমের ডিজিটাল আকাইভিং এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ওয়েবসাইট উন্নয়ন করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস