Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: ৯ বছরেও শেষ হয়নি বিচার, ঝুলছে সাক্ষ্যতে

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২১ ১১:১৩

ঢাকা: রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আজ ৯ বছর। সেই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক। ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করলেও ৯ বছরেও শেষ হয়নি তার বিচারকাজ। এখনো শেষ হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলাটির নির্ধারিত সময়ে সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় বিচার থমকে আছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। জরিনা বেগম নামে এক আহত শ্রমিক আদালতে সাক্ষ্য দেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিধ ধার্য করেছেন আদালত। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রেহানা আক্তার জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দিন আদালত বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। গত ধার্য তারিখে আহত এক শ্রমিক সাক্ষী দিয়ে গেছেন। সমস্যা হলো মামলার যারা সাক্ষী অধিকাংশই তাজরীন ফ্যাশনের কর্মী। অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। স্থায়ী ঠিকানাও নেই। একারণে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হচ্ছে। আশা করি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করব।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রোকেয়া বেগম জানান, মামলাটিতে নিয়মিত সাক্ষী হচ্ছে না। সাক্ষী আসুক বা না আসুক আসামিদের তো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। মামলার অনেক আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। এখানে দুলাল উদ্দিন নামে যাকে আসামি করা হয়েছে উনি ঘটনার দিন সেখানে ছিলেন না। অন্য দুলালের জায়গায় তাকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ডেকে এনে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলে অনেককে আসামি করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এটা আসলে একটা দুর্ঘটনা। এ পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদের কেউই এমন বক্তব্য দেননি যার মাধ্যমে বলা যায় যে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এসেছে। অন্যায় প্রমাণ না হলেও তারা সাজা পাচ্ছেন।

২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্তের পর ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের পরিদর্শক এ কে এম মহসীনুজ্জামান।

মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

তবে এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা, শামীম, ও মোবারক হোসেন পলাতক রয়েছে। শহিদুজ্জামান দুলাল কারাগারে। অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর আসামি শহীদুজ্জামান আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন আদালত। আগামী ২৫ নভেম্বর আসামির জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাজরীন গার্মেন্টস ভবনের নকশায় ত্রুটি ও জরুরী নির্গমনের পথ ছিল না। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ আদালত।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৩ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। অন্যদিকে আহত হন আরও ১০৪ গার্মেন্টস শ্রমিক। গার্মেন্টসটিতে সে সময় ১ হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনায় নিহত ১১১ জনের মধ্যে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন, পরবর্তীতে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান ১১ জন। ৫৮ জনের লাশ শনাক্ত হওয়ায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৩ জনের লাশ শনাক্ত না হলেও তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সারাবাংলা/এআই/এসএসএ

তাজরীন অগ্নিকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর