Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে: রাষ্ট্রপতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৩৩

ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত নিষ্পত্তি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে দেশে স্বস্তি বিরাজ করছে যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া স্মারক বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি। এর আগে, বিকেল তিনটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকের শুরুতেই রাষ্ট্রপতির ভাষণে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সুশাসনের উদ্দেশ্যে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা, সিটিজেনস চার্টার এবং শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দলসমূহকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালীন একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। করোনার অব্যাহত ঢেউ অগ্রাহ্য করে জাতি সাড়ম্বরে উদযাপন করছে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাগ্যবান। দেশে-বিদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপনের এ শুভক্ষণে আমি আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে মাননীয় সংসদ-সদস্যবৃন্দসহ প্রিয় দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসরত সকল প্রবাসীকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।’

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ওই দিনই তাকে হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে। তার নির্দেশনায় কৃষক-শ্রমিক ছাত্র-জনতা যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয় এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লাখ শহিদের জীবন ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ অর্জিত হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়, সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন- স্বাধীনতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণহীন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘বাংলার মানুষের মুক্তি’ অর্থাৎ সোনার বাংলা বিনির্মাণ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত নবীন দেশটির প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু যখন মানুষের খাদ্যাভাব দূরীকরণ, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী নীতি ও আইন প্রণয়ন করে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন স্তব্ধ করে দেয়।’

মো. আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন অনেকেই সদ্য স্বাধীন দেশটির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন রবিনসন ‘ ইকোনমিক প্রসপেক্টাস অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে ‘ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশন’র সঙ্গে তুলনা করেন, যার পরিণতি দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যু। তৎকালীন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনা করেন। কারণ সেসময় বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে অনেক বাঁধা ছিল। যা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু, আজ সব আশঙ্কা ও নেতিবাচক ভবিষ্যৎবাণী ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান।”

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে তালিকাভু্ক্ত হয়। ১৯৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং উপযুক্ত নীতি ও কার্যক্রমের অভাবে অর্থনীতিতে তেমন গতি সঞ্চার হয়নি। তবে বিগত একযুগেরও বেশি সময় ধরে জাতির পিতার আদর্শের সরকার দায়িত্বে থাকায় তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’র নির্ধারিত তিনটি সূচক মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকের প্রতিটিতে নির্ধারিত স্কোরের বেশি অর্জন করায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে, যা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষণে দেশের এ সাফল্য জাতির জন্য বয়ে এনেছে এক অভাবনীয় গৌরব।’

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। এখন পৃথিবীর যে ১১টি দেশকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য ‘উদীয়মান-১১’ বলে অভিহিত করা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পর পর তিনব ছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে উন্নীত হয়। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও যে কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিপ্রধান দেশ এখন আধুনিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নতির এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, অন্যদিকে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান জিডিপিতে যথাক্রমে ৩৫ ও ৫২ শতাংশ যা অত্যন্ত আশাপ্রদ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেছে বৃটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ।”

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর