Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বঙ্গবন্ধুর ৬ দফায় ছিল স্বাধীনতার গন্ধ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২১ ১৩:৪৪

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক এমপি বলেছেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফায় স্বাধীনতার গন্ধ পেয়েছিলাম। ওই সময় আমি ছাত্র রাজনীতি বুঝি না। তারপরও বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদারের দোসররা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর ২১ বছর এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে বেড়িয়েছে, জেল খেটেছে, জীবন দিয়েছে। এরপর সূর্যের আলো হয়ে আমাদের মাঝে হাজির হলেন বঙ্গবন্ধু সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে উচ্চস্থানে নিয়ে গেছেন। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে রোলমডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন।’

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, ‘এই পার্লামেন্টে যারা আছেন তাদের অধিকাংশরই যৌবনকাল কেটেছে পাকিস্তান আমলের জেলে। তখন পাকিস্তানিদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এমন অনেকেই এই পার্লামেন্টে আছেন।

তিনি বলেন, ‘ওই সময় যারা পাকিস্তান দেখেছেন তারাই এই স্বাধীনতার মর্ম বুঝতে পারবেন। ছাত্র জীবনে রাজনীতি কাকে বলে আমরা তা বুঝতাম না। আমরা বুঝতাম দেখতাম পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নিপীড়ন, শোষণ এবং নির্যাতন। আমরা লেখাপড়া করছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ কী আমরা তার কিছুই জানতাম না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছয় দফার ঘোষণা দিলেন তার মধ্যেই আমরা ভবিষ্যৎ খুঁজে পেলাম। আমরা তখন যে অন্ধকার দেখেছি সেই অন্ধকার কেটে যাওয়া এবং আলো-আশার সন্ধান খুঁজে পাই ছয় দফায়। তখন ভাবি বঙ্গবন্ধু দেওয়া ছয় দফা বাস্তবায়ন হলে বাঙালি জাতির জীবনের অন্ধকার কেটে যাবে। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ আলো আসবেই। তখন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানের পেটোয়া বাহিনী আমাদের উপার হামলা শুরু করে। আমরাও পাল্টা আক্রমণ করতে থাকি। এক সময় দেখি আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তখন আমরা বুঝতে পারলাম ছয় দফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান করলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তোফায়েল আহমেদ ভাই আমাদের নেতৃত্ব দেন। ওই সময় এনএসএফ এর সঙ্গে লড়াই শুরু হয়। এক লড়াইয়ে এনএসএফ এর প্রধান নিহত হলে ওদের মন ভেঙে যায়। এরপর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে আইয়ুব খানের পতন হয়। ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে চলে আসেন। তিনি এসে নির্বাচন ঘোষণা দিলে বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম সে স্বপ্নে গুড়ে বালিতে পরিণত হয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ছাত্ররা গ্রামে গ্রামে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছাত্র দের সংঘটিত করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করি। ২৫ শে মার্চ রাতে আমাদের ওপর আক্রমণ হলো ওই সময় যতটুকু পেরেছি আমরা প্রতিরোধ করেছি। এরপরেই আমরা চলে যাই আগরতলা। ওখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে ঢাকায় চলে আসি, গেরিলা যুদ্ধ শুরু করি। আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল সরকারি স্থাপনা উড়িয়ে দেয়ার। ওই নির্দেশ অনুযায়ী এক এক করে সরকারি স্থাপনা উড়েয়ে দিয়েছিলাম তখন বিবিসি এবং ভয়েস অফ আমেরিকা সংবাদ পরিবেশন হলে পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো, স্বপ্ন দেখেছিলাম এবার দেশে শান্তি ফিরে আসবে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন দেশ গড়ার জন্য মাস্টার প্লান করে কার্যক্রম শুরু করলেন ঠিক সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমাদের ভবিষ্যতে আবার নেমে আসে অন্ধকার। পচাত্তরের পর থেকে ২১ বছর আমরা পালিয়ে বেরিয়েছি। অনেকে জেল খেটেছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এরপর দেশে ফিরে আসেন জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সূর্যের আলো হয়ে আমাদের মাঝে হাজির হন। তিনি আমাদের পথ দেখালেন। সোনার বাংলা গড়ার জন্য তিনি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। শান্তি ফিরে এসেছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর