Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সংসদে সাধারণ প্রস্তাব গৃহীত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২১ ২১:২৫

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করলে সেটি সংসদ গ্রহণ করে। এর আগে প্রস্তাবটির ওপর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা দুই দিনব্যাপী বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) সংসদে প্রস্তাব আনেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। পরে তিনি প্রস্তাবের ওপর নিজেই বক্তব্য দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। ওই দিনই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের স্মারক বক্তৃতা দেন। পরে ৫৯ জন সংসদ সদস্য ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে স্পিকার প্রস্তাবটি সংসদে ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৫০ বছরের অর্জন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্জন তুলে ধরেন। এসময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের সদস্যরা বর্তমান সরকারের বেশকিছু কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। আলোচনায় তারা জাতীয় ঐক্যমত্যের কথাও বলেন।

আরও পড়ুন- সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে: রাষ্ট্রপতি

সংসদে পাস হওয়া প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবটি ছিল— অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মহান শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাক সেনাদের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৩০ লাখ মহান শহিদ, আত্মত্যাগী ২ লাখ মা-বোন, সব বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা— সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহিদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

আরও পড়ুন- ‘কোভিডে উন্নয়ন-অগ্রগতি সাময়িক বাধাগ্রস্ত হলেও থেমে যায়নি’

প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবার জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতাদখল, সংবিধানকে সামরিক ফরমান দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করা হয়। ১৭ মে ১৯৮১ সালে নির্বাসন শেষে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন- সরকার ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়। ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গৃহহীন ৯ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া , সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স , রিজার্ভ প্রতিটি সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম।

আরও পড়ুন- সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময়: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা মহামারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রায় যুক্ত করেছে অনন্য মাইলফলক। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

প্রধানমন্ত্রীর তার প্রস্তাবে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সকবল চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যহীন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক— এই হোক আমাদের প্রত্যয়।

ফাইল ছবি

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সংসদে সাধারণ প্রস্তাব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর