১ কোটি ৬২ লাখ কৃষকের ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরির উদ্যোগ
২৬ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৩৮
দেশের ৫ কোটি কৃষকের মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষকের ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি এবং এক কোটি ৯ লাখ কৃষককে স্মার্ট কৃষি কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষকের সঙ্গে সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ, তথ্যের আদান-প্রদান ও এলাকাভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ডিজিটাল কৃষি তথ্যের সাহায্যে উৎপাদন পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ট্রেসিবিলিটি নির্ণয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা এবং নারী কৃষক ও নারী কৃষি উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল সচেতনতা ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ সেবাগুলো কৃষক মাঠ স্কুল, কৃষক সংগঠন, প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার, রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার এবং লিফলেট বিতরণ, মাইকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি সেবা দেওয়া হয়। এ ব্যবস্থায় কৃষকদের নিকট হতে সেবার মান সম্পর্কে কোনো ফিরতি বার্তা পাওয়া যায় না আবার কৃষকদের জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি কোনো সম্প্রসারণ কর্মীর নিকট পৌঁছানোর কাজটি সময়, ব্যয় ও কষ্টসাধ্য হয়। ফলে সম্প্রসারণ সেবাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
চলতি বছরের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের জন্য ২০১৬ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কৃষি বার্তায়ন এবং কৃষক বন্ধু ফোন সেবা ৩৩৩১ নামক দুটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এই উদ্যোগের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতের কর্মসূচি ও এটুআই এর মাধ্যমে পাইলট আকারে সারাদেশ থেকে প্রায় ৫৩ লাখ কৃষক ডাটাবেইজ (প্রাথমিক ১৪টি তথ্য) সংগ্রহ ও এর মাধ্যমে কৃষি সেবা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে কৃষি বিষয়ক সম্পূর্ণ তথ্য সম্বলিত কৃষকের ডিজিটাল ডাটাবেইজ থাকার সুবিধা উপলব্ধ হওয়ার জন্য দেশের সকল কৃষক এবং কৃষি উৎপাদনকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার অধীনে আনার উদ্দেশ্য থেকেই এ প্রকল্পের সূচনা।
ডিজিটাল কৃষক প্রোফাইল তৈরি,স্মার্ট কার্ড বিতরণ, ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিশ্লেষন ও তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কৃষি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেয়া কৃষকের জন্য সহজ হবে। এতে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, একই সাথে কৃষকের অধিকতর ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, কৃষি বাতায়নে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষকের ডিজিটাল প্রোফাইল প্রস্তুতকরণ, এক কোটি ৯ লাখ কৃষকের জন্য স্মার্ট কৃষি কার্ড তৈরী ও বিতরণ, ১ কোটি ২০ লাখ কৃষকের নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্বের তথ্য যাচাইকরণ, ৩১টি মডিউলে স্মার্ট কৃষি কার্ড ডাটাবেইজ ক্লাস্টার, কৃষক সেবা ও রিপোর্টি সফটওয়ার ও অ্যাপস প্রস্তুতশরণ, ডিজিটাল কৃষি ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে টিওটি প্রশিক্ষণ, অফিসার প্রশিক্ষণ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ৯০০ জন আইসিটি চ্যাম্পিয়ন কৃষক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, ১৪টি কৃষি উদ্ভাবন শোকেসিং এবং ৩টি জাতীয় ও ১৪টি আঞ্চলিক কর্মশালা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রকিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল কৃষি প্রোফাইর তৈরী, স্মার্ট কৃষি কার্ড বিতরণ, ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কৃষকের কৃষি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এএম