বেসিক ব্যাংক: তদন্ত শেষেও দুদকে আটকা ৫৬ মামলার প্রতিবেদন
২৬ নভেম্বর ২০২১ ১০:৪৯
ঢাকা: বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ৫৬টি মামলার তদন্ত শেষ করে বসে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তারা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না পাওয়ায় দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ পাওয়ার পরও এসব তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দিতে পারেননি তারা। ৬ বছর পার হলেও কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় অন্যরকম রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন খোদ তদন্ত কর্মকর্তারাই।
জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণের নামে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের তথ্য প্রমাণ দিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৫৬টি মামলা করে সংস্থাটি। আসামি করা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা, ঋণগ্রহীতাসহ ১২০ জনকে।
২০১৫ সালে যখন এসব মামলার তদন্ত চলছিল, তখন দুদক চেয়ারম্যান ছিলেন বদিউজ্জামান। তিনি তদন্ত শেষ করে যেতে পারেননি। পরের বছর চেয়ারম্যান হন ইকবাল মাহমুদ। তার পাঁচ বছরেও বেসিক ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়নি। তবে আত্মসাতের অর্ধেক টাকা তার আমলে ফেরত আসে। ইকবাল মাহমুদের পর সংস্থাটির সর্বোচ্চ চেয়ারে বসেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তার আমলের নয় মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
জানা গেছে, ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়। কোনোরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পরিচালনা পর্ষদ প্রভাব খাটিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দেয়। ঋণের নামে এসব অর্থ লুট করা হয়েছে। এছাড়া বেসিক ব্যাংক জালিয়াতিতে যোগসাজশ পাওয়া গেছে আবদুল হাই বাচ্চুসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তির। অপরদিকে দুদক নামমাত্র কয়েকবার আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাদের দায় শেষ করেছে। বাচ্চুকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৬ ডিসেম্বর। পরে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বাচ্চুকে তৃতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর আর বাচ্চুকে ডাকা হয়নি।
এদিকে বেসিক ব্যাংকের তদন্তের ধীরগতির বিষয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাচ্চুসহ তৎকালীন পর্ষদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত ও আদালতে চার্জশিট দেওয়ার জন্য দুদকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্ত শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে দুদক আইনে সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিলের নিয়ম থাকলেও ৬ বছরে মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের ডেকে ক্ষোভও জানান।
বেসিক ব্যাংকের তদন্ত কতদিন চলবে? এই প্রশ্নের উত্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, অনন্তকাল ধরে কিছুই চলতে পারে না। আমরা দ্রুতই চেষ্টা করছি বিষয়টি শেষ করার। আশা করি খুব দ্রুতই শেষ হবে সবকিছু।
সারাবাংলা/এসজে/এএম