দোষ স্বীকার করে ফেসবুক লাইভে কাঁদলেন মেয়র আব্বাস
২৬ নভেম্বর ২০২১ ২০:১৪
রাজশাহী: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করলে পাপ হবে এমন কথা বলেছেন স্বীকার করে নিয়ে ফেসবুক লাইভে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী।
সোমবার (২২ নভেম্বর) মেয়র আব্বাসের দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে।
এর আগে, তিনি ওই কথোপকথনকে এডিট করা দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি তার আগের কথার বিপরীতে অবস্থান নেন।
ভিডিওতে মেয়রকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। নিজের ভুল হয়েছে স্বীকার করে তিনি সবার কাছে সহানুভূতি চান।
এদিকে, আব্বাসের শাস্তির দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে রাজশাহীতে। মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে মেয়র আব্বাস গা ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি ফেসবুকে লাইভে আসেন।
বক্তব্যের শুরুতেই ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিওটি মনোযোগ সহকারে শোনার অনুরোধ জানান মেয়র। বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাকে নিয়ে কটূক্তি করার দুঃসাহস তার নেই। তিনি কটূক্তি করেননি। তবে ম্যুরাল নিয়ে তার কথা আছে। তিনি বলেন, এখানে একটা বড় মাদরাসা আছে। মাঝে মধ্যেই জানাযা বা অনুষ্ঠানের কারণে যাওয়া হয়। গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে মাঝে মাঝে বসা হয়। যতটুকু মনে আছে, কোনো জানাযায় ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানকার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মাহমুদ সন্দিপি। যতটুকু দেখেছি, আল্লাহর রাস্তা ছাড়া দুনিয়াদারি কোথাও তাকে পাইনি। তিনি কষ্ট করে মাদরাসাটা গড়ে তুলেছেন। তার শিষ্যরা সারা বাংলাদেশে বিচরণ করছেন। সারারাত তিনি নামাজ পড়েন। তার হাঁটুতে ব্যাথা, উঠতে পারেন না। যতটুকু মনে হয়েছে, তিনি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহওয়ালা একজন মানুষ। সন্দেহ নাই। মাদরাসায় বসেছি, তিনি বলেছেন- তার ছাত্র তাকে কাটাখালী গেটের ভিডিও দেখিয়েছেন। তিনি বললেন, ম্যুরালটার বিষয়ে কোনো চেঞ্জ আনা যায় না? আমি বললাম, কী সমস্যা? উনি ব্যাখা দিলেন। বোঝালেন। আমি শুনেছি। আমি তো মানুষ, আমি তো একটা মুসলমান। আল্লাহর কথায় আসলে কে না দূর্বল হয়। একটু দুর্বল হলাম। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করিনি। বলেছি, ম্যুরালটা করলে ইসলামে ঠিক হবে না। এটা পাপ হবে। আড্ডার মধ্যে অনেক গল্পই তো মানুষ করে। আমিও হয়ত করেছি। হয়ত ভুল করেছি, কিন্তু কত বড় ভুল করেছি?’
আব্বাস বলেন, সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রশ্ন, কত বড় ভুল করেছি? আমার বিরুদ্ধে মিছিল করল, ভাঙচুর করল। মামলা দিল। দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবুও মেনে নিয়েছি। ভালবাসার মানুষজন যারা আছেন, তাদের ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত আছে। কাউন্সিলরদের ডেকে, থ্রেট করে ১২ জন কাউন্সিলরের অনাস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই ডকুমেন্ট আছে। কাটাখালীতে দোকানপাটগুলোতে হামলা করল। ছোট্ট সোনামনিদের জন্য একটা শিশুপার্ক করেছিলাম। সেই মাঠটা ভেঙেচুরে শিশুদের খেলাধুলা তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। কী দোষ করেছিল ওরা জানি না।’
কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়র বলেন, ‘আমি তো মানুষ। আমি তো ভুল করতেই পারি। তার জন্য ক্ষমা চাই। তারপরও মনোপুত না হলে বহিষ্কার করবেন, আমার নামে মামলা দিবেন যতটুকু ভুল করেছি তার জন্য। কিন্তু একের পর এক অত্যাচার জুলুম। আমার অসুস্থ মা তিন-চারদিন না খেয়ে আছে। বাড়িতে মাদক রেখে আমার মাকে-বউকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। আমি কী এত বড় অন্যায় করেছি? অন্যায় করলে তো আইন আছে। এভাবে এতকিছু করা কি ঠিক? আমি কতবড় অন্যায় করেছি। আমাকে বলা হচ্ছে, আমি দলের অনুপ্রবেশকারী। আমি যদি আওয়ামী লীগ ব্যাতিত জীবনে অন্য কোন দল করে থাকি তাহলে সব শাস্তি মাথা পেত নেব। ২০০২ সালে যুবলীগ দিয়ে আমার শুরু। ৭ মার্চের ভাষণ আমার চোখ খুলে দিয়েছে। তারপর থেকে যুবলীগ করছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল করেছি, কেউ প্রমাণ করতে পারলে সুইসাইড করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী বানানো হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার মালিক বানানো হচ্ছে। ব্যাংকে লোন কত সেটা নিয়ে লাইভে আসব। যদি আপনারা মনে করেন বড় অন্যায় করেছি, পাশে দাঁড়ানোর দরকার নাই। যদি আমার ওপর অন্যায় হয় তাহলে পাশে দাঁড়ান। আমি সহযোগিতা চাই। আমার অসহায় মাকে দেখতে দিন। চার মাসের বাচ্চার কাছে যেতে চাই। আমার পাশে একটু দাঁড়ান প্লিজ। আল্লাহর ওয়াস্তে দাঁড়ান।’
মেয়র আব্বাস বলেন, ‘আমি যদি বুঝতে পারি, আমার কথায় আপনার বিবেক নাড়া দিয়েছে, তাহলে পর্যায়ক্রমে একটা একটা করে সবগুলো খোলস খুলে দেব। আমাকে নিয়ে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার পাশে আপনাদেরকে দরকার। আমি আজ কয়দিন ধরে না খেয়ে আছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে হেল্প করুন। আমাকে বাঁচান প্লিজ।’
সারাবাংলা/একেএম