চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাকিস্তানের জার্সি পরে চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় ধাওয়া খেয়ে নালায় লাফিয়ে পড়েন এক ব্যক্তি। এসময় তিনি কানে ধরে আর কোনোদিন পাকিস্তানকে সমর্থন করবেন না অঙ্গীকার করে ক্ষমা চান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এরপর ধাওয়াকারীরাই তাকে আবার নালা থেকে তুলে আনেন।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাগরিকায় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে এ ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. আব্দুল ওয়ারিশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশপথ থেকে একটু দূরে জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু তরুণ-যুবক দাঁড়িয়েছিলেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় একজন ব্যক্তি পাকিস্তানের জার্সি পরে গ্যালারিতে প্রবেশের জন্য যাচ্ছিলেন। তখন ওই তরুণ-যুবকরা তাকে ধাওয়া দিলে সে লাফিয়ে ড্রেনে পড়ে যায়। পরে যারা ধাওয়া দিয়েছেন তারাই আবার তাকে তুলে আনেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত তরুণ-যুবকদের নিবৃত্ত করি।’
এর আগে, সকাল ১০টা থেকে সাগরিকায় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ‘পাকিস্তানি দালাল-রুখবে তারুণ্য’সহ বিভিন্ন সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ‘পাকিস্তানি দালাল-রুখবে তারুণ্য’ সংগঠনের আহ্বায়ক হামজা রহমান অন্তর।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পাকিস্তানের জার্সি পরা এক ব্যক্তিকে কয়েকজন তরুণ-যুবক মিলে জেরা করছেন। একজনকে জার্সির কলার টেনে ধরতে দেখা যায়। কথোপকথনের মধ্যেই ওই ব্যক্তি হঠাৎ দৌড় দেন। এসময় তরুণরাও তার পেছনে ‘ধর, ধর’ বলে ধাওয়া করেন। পরে ওই ব্যক্তিকে ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ একটি নালার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
জমায়েতে অবস্থান নেওয়া সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পলাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জমায়েতের সামনে দিয়েই আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি পাকিস্তানের জার্সি পরে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন। আমরা উনাকে অনুরোধ করেছি যেন, জার্সিটা খুলে ফেলেন। উনি ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেন যে, এটা তার ব্যক্তিস্বাধীনতা। আমরা তার গায়ে হাত দিইনি, মারধরও করিনি। হঠাৎ তিনি নিজেই দৌড়ে গিয়ে নালায় লাফিয়ে পড়েন। তিনি পাকিস্তানের জার্সি পরার জন্য কানে ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর এবং আর কোনোদিন দেশের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না বলার পর আমরা তাকে তুলে আনি। ওই ব্যক্তি তার বাসা মাদারবাড়ি বলে জানিয়েছেন।’
হামজা রহমান অন্তর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তানের পক্ষ নেন, তাদের পতাকা বহন করেন এবং তাদের জার্সি পরে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেন- তাদের প্রতিরোধে আমাদের কর্মসূচি ছিল। যারা বিদেশি নাগরিক এমনকি পাকিস্তানের নাগরিক হলেও তারা আমাদের অতিথি, তাদের আমরা কোনো ধরনের বাধা দিইনি। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, তাদের বিরুদ্ধে খেলায় সেই পাকিস্তানের পক্ষ নিলে সেই দেশদ্রোহীদের প্রতিরোধ করা হবে এটা আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা। সেই ঘোষণা শুনে কুমতলব যাদের ছিল তাদের অনেকেই স্টেডিয়ামে আসেননি অথবা পাকিস্তানের জার্সি পরেননি। দু’য়েকজন বিচ্ছিন্নভাবে এসেছিল, তাদের মধ্যে একজনকে আমরা ধরেছিলাম। তখন সে নিজেই ড্রেনে লাফিয়ে পড়ে।’
পাকিস্তান-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন হামজা রহমান অন্তর।