Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও সেতু পায়নি ৭ গ্রামের মানুষ

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৪৩

সুনামগঞ্জ: বাড়ির সামনে পিয়াইন নদী। গ্রামের বিপরীত পাড় দিয়ে ছুটে গেছে সাচনা বাজার ও সুনামগঞ্জের ব্যস্ততম সড়ক। এই সড়ক থেকে নেমেই বাঁশের চাটাই পার হয়ে জামালগঞ্জের সাচনা বাজার ইউনিয়নের ভরতপুর ও চাঁনপুরসহ সাত গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় তাদের ভরসা খেয়া নৌকা, হেমন্তে বাঁশের চাটাই।

পিয়াইন নদীর উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় হাওরের ফসল ঘরে তোলাসহ যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কৃষক ও সাধারণ মানুষকে। নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি বহুদিনের, সাত গ্রামের কয়েক প্রজন্মের।

বিজ্ঞাপন

ভরতপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিন বণিক আক্ষেপের সুরে জানান, গ্রামের পূর্ব তীরে সুনামগঞ্জ থেকে সাচনা বাজার পর্যন্ত সংযোগ সড়ক রয়েছে। সেই সড়কে উঠতে হলে নদী পার হতে হয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও নদী পারাপারের দুঃখ মোচন হয়নি। বাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ি চলাচল করে ঠিকই, কিন্তু গ্রামের একেবারে কাছ দিয়ে জেলা শহরগামী সড়ক থাকার পরও বাড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি ওঠার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে না তাদের।

দায়িত্বশীলরা নদীর উপর সেতু হবে, হচ্ছে বললেও কাজ হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ২০০০ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল সংসদ সদস্য থাকাকালীন পিয়াইন নদীর ওপর সেতু নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। তখন ভরতপুর গ্রামের দক্ষিণ মাথার বিপরীত পারে সেতু নির্মাণের মালামাল স্তুপ করে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়। পরবর্তীতে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তা বাতিল হয়ে যায়।

পরে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে এসে আমেরিকান একটি সাহায্য সংস্থার অর্থায়নে সাচনা চৌধুরী বাড়ি সেতু ও সাচনা মুসলিম হাঁটির সামনের পিয়াইন নদীতে সেতুসহ সাচনা বাজার ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রাম সংলগ্ন একই নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই প্রেক্ষিতে পাশের সাচনা গ্রামের এপার-ওপারে দু’টি সেতু নির্মিত হলেও ভরতপুরের সেতুটি আর হয়নি। সর্বশেষ বছর তিনেক আগে ফের সেতু নির্মাণের জরিপ হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে আছে পিয়াইন নদীর দুই পারে বসবাসরত নজাতপুর, সেরমস্তপুর, কুকড়াপশি, ভরতপুর, হরিহরপুর, আক্তাপাড়া, চাঁনপুরসহ ৭ গ্রামের মানুষ। নদীর পশ্চিম অংশে একটি বড় হাওর রয়েছে। এই হাওরে এই গ্রামগুলোর সবারই কমবেশি জমি আছে। হেমন্ত মৌসুমে নদী পার হয়ে কৃষিকাজ করতে হয় পূর্ব পারের মানুষদের। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে ধান উঠানোর সময় কৃষকেরা মারত্মক সমস্যায় পড়তে হয়।

অপরদিকে, পশ্চিম পারে অবস্থানরত মানুষগুলো কৃষিতে সুবিধা পেলেও জেলা শহর কিংবা উপজেলা সদরে যেতে হয় নদী পার হয়ে। আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটলেও এখনও পিছিয়ে আছে সুনামগঞ্জ-সাচনা বাজার সড়কের উল্টো দিকের কয়েকটি গ্রাম।

সাচনাবাজার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও কুকড়াপশি গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীর পশ্চিমপাড়ের ৪-৫টি গ্রাম একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নদীতে সেতু না থাকায় অপর পারের গ্রামগুলো বোরো মৌসুমে রৌয়ার হাওর থেকে সরাসরি ধান আনতে পারে না। একটি সেতুর অভাবে উভয় পারের মানুষই চরম ভোগান্তিতে আছে। এজন্য ওই স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি অনেক দিনের।’

বাঁশের চাটাই পার হওয়ার পথে কুকড়াপশি গ্রামের কৃষক রশীদ মিয়া বলেন, ‘ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময় এলে ধান ঘরে তুলতে সমস্যা হয়, যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই।’

তবে আশার কথা জানিয়েছেন উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের দরপত্র চলতি অর্থবছরই হতে পারে। চেষ্টা করা হচ্ছে এই অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করার।’

সারাবাংলা/এমও

পিয়াইন নদী সেতু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর