পড়ার টেবিল, ঘুমানোর বিছানা আছে আগের মতোই, নেই শুধু আবরার!
২৭ নভেম্বর ২০২১ ১২:১২
ঢাকা: ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের দুই বছরের মাথায় আগামী ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
নিহতের আবরার বাবা বরকত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যদণ্ড আশা করি। কেউ যেন মামলা থেকে খালাস না পাই। আমরা রাষ্টপক্ষের কাছে সেই প্রত্যাশা করি। রায়টি যেন দৃষ্টান্তমূলক হয়। আর আমার মতো যের কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়। গত ২ বছর ধরে ছেলের মৃত্যু মামলায় ঢাকা টু কুষ্টিয়ায় যাওয়া আসা করতে করতে আমি বড়ই ক্লান্ত। আমার শরীর ভালো যাচ্ছে না। আবরারের মায়ের শরীরটাও খুব খারাপ। ছেলে হারানোর ব্যথা আজও ভুলতে পারেনি। প্রতিদিনই আবরারের মা ছেলের জন্য কান্না করে। সবসময় ছেলের জন্য চুপচাপ থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবরারের মৃত্যু হয়েছে ঠিক, আসবাবপত্র রয়েছে আগের মতো। সে যে ঘরে পড়ত, ঘুমাত, টিভি দেখত সবকিছু আগের মতোই আছে, শুধু আবরার নেই। তার পোশাক-আশাক সব যত্নে করে তুলে রেখেছে ওর মা। আগে কোনো অনুষ্ঠান হলে ছেলেটা ওর মায়ের সঙ্গে যেত। এখন কোনো জায়গায় যায় না আবরারের মা। সবসময় ঘরে বসে থাকে আর ছেলের জন্য কান্না করে।’
আবরারের বাবা আরও বলেন, ‘আমার ছেলে হারানোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে কেউ আর অপরাধ করার সাহস না পায়।’
বাংলাদেশে একটি নজির সৃষ্টিকারী রায়ের প্রত্যাশা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।
আবরার হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যদণ্ড প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘রাষ্টপক্ষ সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সাজার দাবি করি।’
পলাকত আসামি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছে। যেন তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের আদেশ রয়েছে। বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলে ন্যাক্কারজনক ঘটনার রায়ের দিকে সারা জাতি তাকিয়ে আছে।’
আগামী ২৮ নভেম্বর দুপুর ১২টায় সময় রায় ঘোষণা হতে পারে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা।
আসামি এস এম মাহমুদ সেতু, শামীম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি রায়ে আসামিরা খালাস পাবে। আসামিরা বলেছে, বড়ভায়ের নির্দেশে এই কাজ করেছি। বড় ভাই কারা? মাস্টারমাইন্ড কই। তাদের নাম তো তদন্তে আসেনি।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘ওই ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। এত নিরাপত্তাকর্মী থাকার পরও রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তারা কী করেছে? আবার তারা রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দাখিল করেনি। এখানে কোনো বহিরাগত প্রবেশ করেছে কিনা ভিডিও ফুটেজ দাখিল করলে বোঝা যেত।’
আইনজীবী বলেন, ‘মামলার কোনো মৃত্যু সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়নি। আসামিদের জোর করে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করানো হয়েছে। আসামিরা সেগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আশা করি, আসামিরা মামলার রায়ে খালাস পাবে।’
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। এ ছাড়া তদন্তে আরও ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনজন পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
চার্জশিটভুক্ত পলাতক তিন আসামি হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
সারাবাংলা/এআই/একে