স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ
২৭ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৫৪
ঢাকা: দেশে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ অতিমারিতে লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ক্যানসার নির্ণয় তথা ক্যান্সার স্ত্রিনিং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনিতেই নারীদের স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ত্রিনিং আমাদের দেশে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি নানাবিধ কারণে। তার ওপর করোনার মতো অবস্থায় এটি আরও খারাপ হয়েছে। এজন্য সচেতনা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।
মাসব্যাপী স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচির মূল্যায়ন ও সুপারিশ উপস্থাপনের সময় এ তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ও আন্তর্জাতিক রোটারি যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে। শনিবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) প্রো-ভিসি অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ ও রোটারি জেলা ৩২৮১ এর গভর্নর ব্যারিস্টার মুসতাকিম বিল্লাহ ফারুকী। প্যানেল আলোচক হিসাবে ছিলেন গাইনি অনকোলজিষ্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. স্বপন বন্দোপ্যাধ্যায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি সংগঠন ও রোটারির ৪১টি ক্লাব মিলে ১০ অক্টোবর ৯ম বারের মতো সারাদেশে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন ও মাসব্যাপী সচেতনতা ও ফ্রি স্ক্রিনিং কর্মসূচীর আয়োজন করে। প্রত্যাশার বেশি সাড়া এবং স্ক্রিনিং সেবায় গুণগত উত্তরণের পাশাপাশির সীমাবদ্ধতা দেখা গেছে। এসব বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারলে মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয় এবং মানুষ তাতে অংশ নেয়, এটা প্রমানিত হয়েছে। স্ক্রিনিং যে ব্যথা বা কষ্টদায়ক কোনো প্রক্রিয়া না, এই বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের সহযোগিতায় বিএসএমইউ কর্তৃক পরিচালিত স্তন ও জরায়ুর মুখের স্ক্রিনিং কর্মসূচী গত ১৫ বছরে লক্ষমাত্রার শতকরা ১০ ভাগের কম নারীকে আওতায় আনতে পেরেছে। এর আওতা বাড়াতে হাসপাতাল ভিত্তিক সেবা থেকে জনগোষ্ঠী বা সমাজভিত্তিক সেবার উন্নয়ন জরুরি। এছাড়া জনগণকে স্ক্রিনিংয়ে উদ্ধুদ্ধ করতে সংবাদমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে সরকারের কর্মসূচিতে সংযুক্ত করলে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র কমৃপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও তার আওতায় প্রতিরোধ রোগ নির্নয়, স্ক্রিনিং, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সর্বসাধারণের কাছে পৌছে দেওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার।
জাতীয়ভাবে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সরকারকে যথাযথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বিত্তবান মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সভায় বলা হয়, ক্যান্সার রোগীদের জন্য অলাভজনক ও সমন্বিত ক্যান্সার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন। বিশ্বের অনেক দেশে বিত্তবান ব্যক্তিগণ এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করে অসহায় মানুষদের সেবায় এসেছেন ও ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। আমাদের দেশে রণদা প্রসাদ সাহার উদ্যোগে মির্জপুরে কুমুদিনি হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার রেডিওথেরাপি মেশিন প্রথম চালু হয়।
রোটারি সারাবিশ্বে পোলিও নির্মুলসহ স্বাস্থ্য সেবায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্টায় রোটারির অগ্রণী ভুমিকা ছিল। দেশের বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতারগুলো রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, এ জন্য আমারা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে চিকিৎসা ব্যয় অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। রোগীর আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা ব্যয়ের প্যাকেজ নির্ধারণে ও শতকরা ১০ভাগ সেবা অসহায় রোগীদেও জন্য বিনামূল্যে দেওয়ার অনুরোধ জানান বক্তরা।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস