ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য রোববার (২৮ নভেম্বর) দিন ধার্য রয়েছে। এদিন দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করবেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চায়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আবরারকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটি আমরা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখিয়েছি। এই মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণসহ যত এভিডেন্স ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল তা দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, আসামিরা প্রত্যেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই মামলার কার্যক্রম মাঝখানে কিছু দিন বন্ধ ছিল। তা না হলে এই মামলার রায় এতদিনে হয়ে যেত। আদালত খোলার পর আমরা খুব দ্রুতই মামলার কার্যক্রম শেষ করেছি।’
সংশ্লিষ্ট রাষ্টপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা, সাক্ষীদের জবানবন্দি, যুক্তিতর্কসহ অন্যান্য আলামত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ হত্যাকাণ্ডে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা (মৃত্যুদণ্ড) প্রত্যাশা করছি।’ এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে, আসামিপক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। মামলায় আসামিদের জোড়পূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৬৪ ধারা করানো হয়। পরে অনেক আসামি ১৬৪ প্রত্যাহার করেছেন। আশা করি, আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন। মামলার রায়ে সব আসামি খালাস পাবেন।’
গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই তারিখ ধার্য করেন। মামলাটিতে মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। গত ১৩ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলার নথিটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। এছাড়া তদন্তে আরও ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর তিন জন পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
চার্জশিট ভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
চার্জশিট ভুক্ত পলাতক তিন আসামিরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।