ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া দেশ থেকে যাত্রী আসা বন্ধের সুপারিশ
২৮ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩৯
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে যাত্রী আসা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কোভিড ১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটির ৪৮ তম সভায় ২৮ নভেম্বর এই সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া সভা-সমাবেশ সীমিত করাসহ চারটি সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
বৈঠকে পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়— করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওমিক্রনকে উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর বিস্তার রোধে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বতসোয়ানা সোয়াজিল্যান্ড থেকে যাত্রী আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও ওই সব দেশ এবং যে সব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সে সব দেশ থেকে যাত্রী আসা বন্ধ করাসহ চারটি সুপারিশ করেছে কমিটি।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— সাম্প্রতিক সময়ে (অন্তত ১৪ দিন) কোনো ব্যক্তির ওই সব দেশে ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে, দেশে তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে আইসোলেশনে রাখতে হবে। প্রতিটি স্থলবন্দরে করোনা শনাক্তকরণ মেশিন ও স্কুল-কলেজসহ সব জায়গায় সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোর করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করতে হবে। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিনা মূল্যে পরীক্ষা করারও সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের হার প্রায় দুই মাসের অধিক সময় দুই শতাংশের নিচে। এমন অবস্থায় নতুনভাবে শঙ্কা জাগাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন রূপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯-এর এই নতুন রূপের নাম দিয়েছে ওমিক্রন (বি.১.১.৫২৯)। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি বার জিন বদলানো সংস্করণ বলা হচ্ছে ওমিক্রনকে। আর তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরইমধ্যে এই রূপ বা ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও বতসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম ও হংকংয়ের ১০৪টি নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আর তাই এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক অবস্থা নেওয়া হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে ওই দেশগুলো থেকে আসা ভ্রমণকারীদেরও কোয়ারেনটাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো এবং সুইজারল্যান্ডও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সতর্কতার অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থা।
এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। তাই সতর্কতা হিসেবে আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দর ও অন্যান্য প্রবেশপথে স্ক্রিনিং বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত করে বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, তাদেরকে অকারণে শাস্তির মুখে ফেলা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনার অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়েও বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা ওমিক্রনের। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের খবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) জানায়। পরে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং, ব্রিটেন এবং ইসরাইলেও এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ আফ্রিকার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রিটেন, আইরিশ বা যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা নয় এমন কেউ দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসওয়াতিনি থেকে ভ্রমণকারীরা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। এ সব দেশের সঙ্গে সোমবার থেকে বিমান যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং সুইজারল্যান্ডও সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে জানার পর বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তার উন্নত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যা করছে শাস্তি দেওয়ার মতো।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়— বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কিন্তু দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে আলাদা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারিন্টিন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। ভাইরাসটির নতুন এ ধরনটির টিকা কার্যকর না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই ধরনটিকে বলা হচ্ছে বি.১.১.৫২৯।
কোয়ারেন্টিন জোরদারের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, সিঙ্গাপুর ও জাপান। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
এদিকে মালাবি থেকে দেশটিতে আসা একজনের শরীরে করোনার নতুন এ ধরন শনাক্ত হওয়ায় আফ্রিকার নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে ইসরায়েল।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশেপাশের দেশগুলো থেকে যাত্রীদের ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি।
এ ছাড়া বার্তা সংস্থা রয়াটার্স জানিয়েছে, জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘রূপান্তরিত ভাইরাসের এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আশেপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট আসায় অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এশিয়ার দেশ জাপান ও সিঙ্গাপুর। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে দেশগুলোকে সতর্ক করেছে।
ওমিক্রন কেন শঙ্কা বাড়াচ্ছে?
একদিকে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা আর অন্যদিকে এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে ভ্যাকসিনের প্রভাব কতটুকু— এই দুই ভাবনাতেই বিশ্বজুড়ে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাদের সবাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছিল। আর তাই চিন্তা বাড়ছে বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে তাদের কোনোটি করোনার জেনেটিক উপাদান (mRNA)-এর উপর ভিত্তি করে, কোনোটি স্পাইক প্রোটিনের গঠনের ওপর ভিত্তি করে, কোনোটি আবার নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস ব্যবহার করে। সেখানেই সীমাবদ্ধতা। যেহেতু এই করোনাভাইরাস আদতে রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড ভাইরাস (RNA Virus) তাই বিপদ অনেক।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের অবিশ্বাস্যরকমভাবে পরিবর্তিত একটি রূপ হচ্ছে ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক তুলিও দে অলিভেইরা বলেছেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে বিপুল সংখ্যক মিউটেশন ঘটেছে এতে’ এবং এটি করোনার অন্যান্য রূপগুলো থেকে ‘একেবারেই আলাদা’।
তিনি বলেন, ‘এতে সব মিলিয়ে ৫০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটেছে। আর শুধু এর স্পাইক প্রোটিনেই ৩০টিরও বেশি মিউটেশন হয়েছে, যা ভাইরাসটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করেই ভাইরাসটি আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিনও এই স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করেই বানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসটির যে অংশ আমাদের শরীরের কোষের সঙ্গে প্রথম সংযোগ স্থাপন করে, সেই রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেনে ১০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটেছে। এর আগে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বেলায় যেখানে মাত্র দুটি মিউটেশন ঘটেছিল। কিন্তু, রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেনে মাত্র দুটি মিউটেশন নিয়েই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল।’
বিজ্ঞানীদের হাতে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর বদল হয়েছে মূলত স্পাইক প্রোটিনে। ৩২ বার স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোতে বদল হয়েছে। জিনের প্রোটিন মধ্যস্থ অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থান বদল হয়েছে ৩২ বার। ফিউরিন (একটি প্রোটিয়েজ উৎসেচক) ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন হয়েছে তিন বার। অর্থাৎ রূপ না বদলালেও চরিত্র বদলেছে বেশ কিছুটা।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহীদুল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের আলাদাভাবে নতুন করে সতর্ক হওয়ার কিছু নেই। যতদিন মহামারি এই বিশ্বে থাকবে ততদিন সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই এই সতর্কতা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে প্রাথমিক যে ধারণা পাওয়া গেছে তাতে এর ছড়ানোর ক্ষমতা ও তীব্রতা বাড়াতে পারে। তবে এটি ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডিকে এসকেপ করতে পারবে কি না তা নিয়ে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত কোনো গবেষণা হয়নি। এ কারণে বিশ্বের সবাই সতর্ক অবস্থানে আছে। আমাদেরও দেশের বন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। এটি যেকোনো সময়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদেত কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে আসতে হবে। ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেনো সেটা থেকে বাঁচার উপায় ও ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কিন্তু একই থাকে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাইকে সবসময়ই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। তবে এখন পর্যন্ত স্বস্তির বিষয় হলো, দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরনের রোগী এখন পর্যন্ত খুবই কম পাওয়া গেছে। আর আমাদের এই অঞ্চলেও তেমন একটা পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা ও বতসোয়ানাতে পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, এ ধরনের স্পাইক প্রোটিনে ৩২টা মিউটেশন রয়েছে। এখন স্পাইক প্রোটিন যেহেতু ভ্যাকসিনের একটা কার্যকরী অবস্থা তৈরি করে, এই ধরন সেটা কমিয়ে দিতে পারে। তবে এখনো তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু অনেকগুলো মিউটেশন হয়ে গেছে, সেজন্য এমন আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সবসময়ই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। দেশের ভাইরাসের সিকোয়েন্স করছি। আমাদের এ অঞ্চলে এখনো এই রকম কিছু পাওয়া যায়নি।’
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও রোগ নির্ণয় বিভাগের পরিচালক এবং আইইডিসিআরের পরিচালককে ই-মেইলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, আমাদের অবিলম্বে দেশের সবগুলোকে ‘পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে’ কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এসব পয়েন্টে পাবলিক হেলথের জনবল বাড়াতে হবে। প্রত্যেকটা কেসের জিনোম সিকোয়েন্স করা দরকার। এটা ছাড়া নতুন ভ্যারিয়েন্ট ধরা যাবে না। করোনার নতুন ধরনটি ঠেকাতে বাংলাদেশের আগাম পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আগাম পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে করোনা নিয়ন্ত্রণে যতটুকু এগিয়েছি, আবার পিছিয়ে যাব।’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাইরাস রূপ বদলাবেই। এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর তাই সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, সিকোয়েন্সিং আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি আমরা সবসময়েই করে যাচ্ছি। তবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব বন্দরে সবসময়ই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। একইসঙ্গে কোয়ারেনটাইনের বিষয়টিও প্রক্রিয়া অনুযায়ী করা হয়। পরামর্শক কমিটির বৈঠক শেষে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরামর্শক কমিটির বৈঠক হবে খুব দ্রুতই। সেখানে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনার সিদ্ধান্ত আমরা জানাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন, সেটা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কিন্তু একটাই; স্বাস্থ্যবিধি মানা। একই সঙ্গে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।’
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘আফ্রিকান নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকাসহ ইউরোপের কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন নামক করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবগত রয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসটি করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কিছুটা বেশি অ্যাগ্রেসিভ হলেও দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে তৎপর রয়েছে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’ ভাইরাসটি নিয়ে অধিক আতঙ্কিত না হয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আফ্রিকান নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে আমরা অবহিত হয়েছি এবং এই ভাইরাসটি খুবই অ্যাগ্রেসিভ। সে কারণে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ এখন স্থগিত করা হচ্ছে। সব এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্টে বা দেশের সকল প্রবেশপথে স্ক্রিনিং আরও জোড়দার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সারা দেশেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে ও মুখে মাস্ক পরায় উদ্বুদ্ধ করতে জেলা প্রশাসনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের আক্রান্ত অন্যান্য জায়গা থেকেও যারা আসবে তাদের বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই স্ক্রিনিং ছাড়া যেন আক্রান্ত দেশের কোনো ব্যক্তি দেশে প্রবেশ করতে না পারে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে