মারধরে বাস চালকের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার ৩
২৯ নভেম্বর ২০২১ ১৭:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে সড়কে মাইক্রোবাসের কয়েকজন আরোহীর সঙ্গে বিতণ্ডা ও মারধরের পর অসুস্থ হয়ে বাসচালকের মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার তিনজনই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। চলতি পথে তাদের মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করা বাস সন্দেহে আরেকটি বাসের গতিরোধ করে চালককে নামিয়ে তারা বিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়েছিলেন।
রোববার (২৮ নভেম্বর) রাত দুইটার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার আমিন কলোনি এলাকা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার তিনজন হলেন- মো. আনোয়ার হোসেন (২৯), মো. মোর্শেদ (১৯) ও মো. রবিউল (২৩)। তারা পরস্পরের আত্মীয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মৃত বাসচালক আবদুর রহিমের (৪৫) বাড়ি রাউজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের আতুরনীর ঘাটা এলাকায়। তিনি নগরীর নিউমার্কেট-হাটহাজারী রুটের দ্রুতযান বাস সার্ভিসের চালক ছিলেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার আমিন জুটমিল এক নম্বর গেইট এলাকায় একদল মাইক্রোবাসের যাত্রী আবদুর রহিমের চালানো বাসের গতিরোধ করে তাকে সেখান থেকে নামিয়ে আনেন। এরপর ঝগড়ার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের মারধরে বাসচালক আবদুর রহিম সেখানে অজ্ঞান হয়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসায় জ্ঞান ফেরার পর তিনি নগরীর রাহাত্তারপুল এলাকায় বাসায় চলে যান। বাসায় গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যরা রাত ১২টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে বাসচালকের মৃত্যুর জেরে শনিবার ভোর থেকে হাটহাজারী বাসস্টেশনে পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে, রাউজানে বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া আবদুর রহিমের লাশ ফের চমেক হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামি থানায় মামলা দায়ের হয়।
সড়কে বিতণ্ডার পর ‘অসুস্থ হয়ে’ বাসচালকের মৃত্যু, সড়ক অবরোধ
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাট থেকে নগরীর মুরাদপুর পর্যন্ত ৭০টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে আমর মাইক্রোবাস এবং এর যাত্রীদের শনাক্ত করি। এরপর তিনজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের বাসা নগরীর আমিন কলোনিতে।’
ভিডিও ফুটেজ এবং গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টমেট্রো-চ- ১১-১৪৩৪ নম্বরের মাইক্রোবাসে তিনজন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা হাটহাজারী থেকে আমিন কলোনির বাসায় ফিরছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক নম্বর গেইট পার হওয়ার পর হাটহাজারী থেকে নগরীর দিকে আসা দ্রুতযান সার্ভিসের চট্টমেট্রো- জ- ১১-১৫৮৫ নম্বরের বাসটি মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করে এগিয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি বালুছড়া পর্যন্ত এসে আবদুর রহিমের চালানো বাসের পিছু নেয়। চৌধুরীহাট পেট্রলপাম্প এলাকায় এসে বাসটির গতিরোধ করে চালককে নামিয়ে আনে। এরপর ঝগড়া, হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করেছিল চট্টমেট্রো- জ- ১১-১৫৮৫ নম্বরের একটি বাস। আর আবদুর রহিম চালাচ্ছিলেন চট্টমেট্রো- জ- ১১- ১৬৬২ নম্বরের একটি বাস। ভুল বাসের গতিরোধ করে চালককে নামিয়ে তারা মারধর করেন। আবদুর রহিম অজ্ঞান হয়ে যাবার পর মাইক্রোবাসের যাত্রীরা ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত সেখান থেকে সরে গিয়েছিলেন। আমরা তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটিও আটক করেছি’, বলেন ওসি কামরুজ্জামান।
সারাবাংলা/আরডি/এমও